ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় শীতের আগমনের সাথে সাথে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। জরুরি মানবিক সহায়তা, আশ্রয় ও শীতের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছাতে ইসরায়েলের বাধার কারণে বিপদে পড়েছেন লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) শনিবার (২৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানায়, গাজার শীতপ্রবণ পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠছে। সংস্থাটির মতে, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য গুদামে রাখা শীতকালীন সামগ্রী, যেমন তাঁবু, কম্বল ও অন্যান্য জরুরি সাহায্য এখনো গাজায় পৌঁছাতে পারেনি। এসব সামগ্রী বর্তমানে জর্ডান ও মিসরে ইউএনআরডব্লিউএ’র গুদামে আটকে রয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ তাদের বিবৃতিতে মানবিক সহায়তা অবাধে গাজায় প্রবেশের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, শীতের কারণে গাজার পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং এখনো লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়ের অভাবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। এদিকে, গাজার মানুষের জন্য শীতকালীন সামগ্রী জরুরি হয়ে উঠলেও ইসরায়েলের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে এসব সামগ্রী সরবরাহে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম কান এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে দেবে না। এর পরদিন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) একটি বিবৃতিতে জানায়, গাজার ফিলিস্তিনিরা যথেষ্ট পরিমাণে মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন না, এবং ইসরায়েলকে অবশ্যই এই সহায়তা প্রবেশে অনুমতি দিতে হবে।
আইসিজে আরও জানায়, ইসরায়েলকে অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, সহায়তা প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরেও গাজায় পণ্য ও ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি বজায় রেখেছে। সম্প্রতি হামাসের সঙ্গে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ভিত্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা। এই চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং পরবর্তী ধাপে গাজা পুনর্গঠন ও হামাসবিহীন একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের কথা রয়েছে।
এদিকে, গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতে গাজার অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং মানবিক সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় আসা পণ্য ও সহায়তা প্রবাহে যে বিধিনিষেধ রয়েছে, তা আরও হতাশাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
গাজায় শীতকালীন পরিস্থিতি এবং মানবিক সংকটের ভীষণ প্রকোপ বেড়েছে, তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রবাহে যে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও আদালতের পক্ষ থেকে সমালোচিত হচ্ছে। মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবাহিত করার আহ্বান জানিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার মানুষের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিতে অব্যাহত রয়েছে।