যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তিনি কানাডার একটি “অ্যান্টি-ট্যারিফ” বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ হয়ে, যা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে ব্যবহার করে প্রচারিত হয়েছিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি থেকে জানা যায়, রোববার (২৬ অক্টোবর) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিজ্ঞাপনকে “প্রতারণামূলক ও শত্রুতামূলক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, কানাডার পক্ষ থেকে প্রচারিত ওই বিজ্ঞাপনটি তার সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছিল এবং এটি তথ্য বিকৃতি করে উপস্থাপন করা হয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, কানাডা তার পূর্বের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে এবং সেই কারণে কানাডার পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের হার ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।
এই বিজ্ঞাপনটি কানাডার অন্টারিও প্রদেশ থেকে প্রচারিত হয়েছিল এবং এতে রোনাল্ড রিগ্যানের পুরানো ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছিল। ট্রাম্প এই বিজ্ঞাপনকে “প্রতারণামূলক” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির বিরোধিতা করেছিল না, বরং তাতে একটি শত্রুতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। শনিবার এক টুইট পোস্টে তিনি দাবি করেন, “কানাডা এই বিজ্ঞাপনটি সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা তা করেনি, ফলে আমরা শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ট্রাম্প এর আগে কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন। এর পরদিন, অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড জানান, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিত এই “অ্যান্টি-ট্যারিফ” বিজ্ঞাপনটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তবে সেই বিজ্ঞাপনটি কিছু সময়ের জন্য, বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড সিরিজের খেলার সময় প্রচারিত হবে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র কানাডার সব পণ্যের ওপর গড়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যদিও কিছু পণ্য বিদ্যমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় শুল্কমুক্ত। বিশেষত ধাতু ও অটোমোবাইল শিল্পের ওপর এই শুল্কের প্রভাব পড়ছে। ধাতুতে ৫০ শতাংশ এবং অটোমোবাইল খাতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই শুল্কের ওপর আরও ১০ শতাংশ পয়েন্ট যোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কানাডার জন্য এই বাণিজ্যিক উত্তেজনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কানাডার মোট রপ্তানির প্রায় তিন-চতুর্থাংশই যুক্তরাষ্ট্রে যায়, এবং অন্টারিও প্রদেশে অবস্থিত অটোমোবাইল শিল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির বড় অংশ দখল করে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি যদি আরও বাড়ানো হয়, তবে কানাডার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে এই শিল্পখাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির প্রতি কানাডার ক্ষোভ নতুন মাত্রা পেয়েছে, বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর। যদিও এই সিদ্ধান্তটি কানাডার জন্য বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারের স্বার্থে নেয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হবে, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বাণিজ্যিক উত্তেজনা কিভাবে সমাধান হয় এবং পরবর্তীতে কী ধরনের নীতি পরিবর্তন ঘটে।