চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ ক্যারিবীয় সাগর অতিক্রম করে জ্যামাইকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই হারিকেনটি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে দ্বীপটিতে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)-এর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বাতাসের গতি ও নিম্নচাপের মাত্রার বিচারে ‘মেলিসা’ বর্তমানে ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়, যা ২০২৫ সালের বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, বর্তমান গতিবেগ অব্যাহত থাকলে এটি জ্যামাইকার ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
এনএইচসি জানায়, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝড়টির অবস্থান ছিল রাজধানী কিংস্টনের দক্ষিণ–পশ্চিমে প্রায় ২৩৩ কিলোমিটার দূরে। ঝড়টি তখন ঘণ্টায় প্রায় ৬ কিলোমিটার বেগে পশ্চিম–উত্তর–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ মাইল (প্রায় ২৮২ কিলোমিটার)।
জ্যামাইকার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিকেও এই ঝড়ের প্রভাবে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। জ্যামাইকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছে, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আগেই সেখানে অন্তত তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে।
ঝড়টির ধীরগতি ও প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করেছে এনএইচসি। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, আগামী চার দিনে জ্যামাইকার বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে, যা প্রাণঘাতী বন্যা ও ভূমিধসের কারণ হতে পারে।
এনএইচসি পরিচালক মাইকেল ব্রেনান এক বিবৃতিতে বলেন, “মঙ্গলবার পর্যন্ত জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঝড়ের কেন্দ্র অতিক্রমের সময় কেউ যেন বাইরে না যায়।”
ঝড় মোকাবিলায় জ্যামাইকা সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। রাজধানী কিংস্টনসহ উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশজুড়ে ৮৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের বিনামূল্যে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডানা মরিস ডিকসন জানান, অক্টোবর মাসজুড়ে দেশটিতে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ভারী বৃষ্টি যুক্ত হলে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, “এটি এমন এক পরিস্থিতি, যা আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এবং অভূতপূর্ব।”
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ‘মেলিসা’ অস্বাভাবিক শক্তিশালী হওয়ায় এটি কেবল জ্যামাইকাতেই নয়, আশপাশের দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিকের পর্বতাঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে জ্যামাইকায় তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। স্থানীয় বিমানবন্দরগুলোতে সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে, এবং দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা ও ঘনত্ব উভয়ই বেড়েছে। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এই ধরনের সুপার ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে, যা ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।