পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সরকার এমন কোনো পর্যবেক্ষক দল আনতে চায় না, যাদের উপস্থিতি অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনই বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাবে এবং এ প্রক্রিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতার দায়িত্ব পালন করবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “সরকার চায় নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টি না হোক। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণের ক্ষেত্রে সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।”
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কোনো দ্বিধা বা অনিশ্চয়তা নেই জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যেও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সবাই জানে, নির্বাচন সাংবিধানিক সময়সীমার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনের সময়সূচি ও প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। সরকার কেবলমাত্র প্রশাসনিক সহায়তা দেবে।
আলাপচারিতায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা তৃতীয় কোনো দেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।”
তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি বড় দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি সর্বদা ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে। তাই চীন কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থ উভয় দিকেই ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সব দেশের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থের ভিত্তিতে সম্পর্ক বজায় রাখা।”
অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের বিষয়ে কূটনৈতিক মহলে কোনো চাপ আছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বিদেশি কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো চাপ নেই।”
তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলো হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তারা কেবলমাত্র একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করে।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি মহলে নানা আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। বিদেশি পর্যবেক্ষক দল পাঠানো এবং নির্বাচনী তদারকির বিষয়টি বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে।
বাংলাদেশ গত কয়েকটি নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের উপস্থিতি অনুমোদন দিয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা ও প্রতিবেদন নিয়ে অতীতে বিতর্কও দেখা গেছে। এ কারণে এবার সরকার ও নির্বাচন কমিশন উভয়ই চায় পর্যবেক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়, সরকার ও নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সহযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখতে আগ্রহী। একই সঙ্গে তারা চাইছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া যেন নিরপেক্ষ, পেশাদার ও বিতর্কমুক্ত থাকে।