অনলাইন ডেস্ক | ঢাকা | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত আইন প্রণয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। এ সময়ের মধ্যে গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে—এমন সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, এটি হবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অংশ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সুপারিশগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী সংসদ তার প্রথম নয় মাস বা ২৭০ দিনের জন্য “সংবিধান সংস্কার পরিষদ” হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই সময়ে গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্ব সংসদের ওপর বর্তাবে।
তবে সংসদ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন একটি বিকল্প প্রক্রিয়ার সুপারিশ করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার তখন সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলোকে “সংবিধান সংশোধনী আইনের খসড়া” হিসেবে তৈরি করবে। ওই খসড়া পরবর্তীতে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে তা অনুমোদন পেলে সংবিধান সংস্কার পরিষদ মূল ভাব অক্ষুণ্ণ রেখে প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করবে। আর যদি সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে তা অনুমোদন না করে, তবে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, “এই প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা পাবে।”
গণভোট আয়োজনের সময়সূচি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কমিশন সরকারকে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো সময়ে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, গণভোট একটি একক প্রশ্নে প্যাকেজ আকারে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হবে—তারা জুলাই সনদ ও সংবিধান সংশোধনী খসড়া বিলকে সমর্থন করছেন কি না।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর “নোট অব ডিসেন্ট” বা ভিন্নমত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে কমিশনের পরামর্শ, এই মতামতগুলো জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হোক। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারবে।
তিনি আরও জানান, কমিশন সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবনায় ৪৮টি বিষয়ের ওপর জনগণের মতামত সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এর মধ্যে গণতন্ত্রের কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ও গণভিত্তিক সংবিধান সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করা। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এই প্রক্রিয়া টেকসই হবে না।”
উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে কাজ করার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনটি গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে।
কমিশনের এই সুপারিশের পর সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন এক পর্বের সূচনা হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। এটি কার্যকর হলে বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভিত্তিক অনুমোদন এবং সংসদীয় দায়বদ্ধতার একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হবে।