রাজনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশে আসন্ন গণভোট প্রসঙ্গে বিএনপি ইচ্ছাকৃতভাবে তা বানচাল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “বিএনপি গণভোট বানচাল করার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এটি শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার ওপর। কমিশন যদি আগে আয়োজন করতে পারে, তাহলে আগে করবে; পরে করলে সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে। যেকোনো সময় গণভোট অনুষ্ঠিত হোক, আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই।”
তিনি আরও বলেন, কমিশনকে গণভোট আয়োজনের আগে দুটি ‘ইলেকশন টেস্টিং’ সম্পন্ন করতে হবে। তার দাবি, “গুন্ডাতন্ত্র ও মাস্তানতন্ত্রের কারণে ভোটকেন্দ্রগুলোতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার সমাধান একমাত্র সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় গণভোট আয়োজনের মধ্য দিয়েই সম্ভব। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত গণভোটের সুষ্ঠু আয়োজন নিয়ে কোনো ইতিবাচক অবস্থান নিচ্ছে না। আমাদের দাবি—গণভোট আগে হোক বা পরে, তা যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের ভোটাধিকারকে আমরা আরও শক্তিশালী করতে চাই।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “তিনি গণঅভ্যুত্থান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গণভোট সংক্রান্ত আদেশে তাকে সই করতে হবে এবং তা জনগণের সম্মুখেই দিতে হবে। এই গণভোট আয়োজন জুলাই সনদের আইনি কাঠামোর অধীনেই হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যে তর্ক-বিতর্ক চলছে, সেটা আসলে রাজনৈতিক মল্লযুদ্ধ ছাড়া কিছু নয়। আমরা মনে করি, এই বিরোধের মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।”
তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ‘সালাহউদ্দিন কমিশন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “সালাহউদ্দিন কমিশন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি। যেমন কেউ বিবাহের আয়োজন করল কিন্তু কবে, কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করল না—তেমনি তারা গণভোটের প্রক্রিয়া নিয়েও কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি। তবে ঐকমত্য কমিশন এখন তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে, এজন্য আমরা কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেন, “রাজনৈতিকভাবে সালাহউদ্দিন কমিশন বাংলাদেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। আমরা সেই প্রভাব থেকে কমিশনকে সঠিক পথে আনতে সক্ষম হয়েছি। সরকারকেও আমরা সতর্ক করেছি যে, সালাহউদ্দিন কমিশনের পথে গেলে শহীদ পরিবারের প্রতি অন্যায় হবে। এনসিপি জনগণের রাজনীতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের পক্ষে কথা বললে যদি অনৈক্য তৈরি হয়, জুলাই সনদ ভণ্ডুল করে পুরনো দলীয় রাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়, তা আমরা হতে দেব না। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দিনের বেলায় গদি নড়লেও রাতের বেলায় তা টিকিয়ে রাখত। আমরা সেই অস্বচ্ছ রাজনীতির ধারাবাহিকতা ভাঙতে চাই।”
দলীয় প্রতীক ‘শাপলা’ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন এখনো আমাদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। আমরা তাদের বলেছি, একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করুন এবং সেই নীতির ভিত্তিতে প্রতীক বরাদ্দের প্রক্রিয়া জাতির সামনে তুলে ধরুন। এখনো পর্যন্ত তারা তার ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, এনসিপি বিশ্বাস করে, জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐকমত্যের কাঠামোকে টেকসই করা সম্ভব। এজন্য দলটি গণভোটের সুষ্ঠু আয়োজন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিতে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে।