অর্থনীতি ডেস্ক
সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের কর্মক্ষমতার ওপর বার্ষিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। তাদের পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কর্মক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ‘সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান/পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা–২০২৫’ জারি করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের শেয়ার রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগে স্পষ্ট যোগ্যতার মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে ধরা হবে। অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতসংক্রান্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ পেশাজীবীরাও নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে রাজনৈতিক বিবেচনা বা ব্যক্তিগত প্রভাব নয়, প্রার্থীর পেশাগত সক্ষমতাকেই নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল মানদণ্ড হিসেবে ধরা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এই নীতিমালা বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি ব্যাংকগুলোর সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, “সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে বার্ষিক কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এর আগে, ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল সরকারি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের জন্য প্রাথমিক নীতিমালা জারি করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের জবাবদিহিতা ও কর্মদক্ষতা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ‘নীতিমালা–২০২৫’ জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংক পূর্বে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল যে, সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে ঋণ বিতরণে অনিয়ম, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং আর্থিক শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। নতুন নীতিমালা এসব সমস্যা মোকাবিলা করে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই প্রণয়ন করা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের বার্ষিক কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড। পরে তা পর্যালোচনা করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই মূল্যায়নের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে তাদের পুনর্নিয়োগ বা দায়িত্বে বহাল থাকার সিদ্ধান্ত।
নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা যেন পেশাগত নৈতিকতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেন, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি, পরিচালকদের জন্য কোড অব কনডাক্ট বা আচরণবিধি প্রণয়ন করা হবে, যাতে স্বার্থের সংঘাত বা ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা যায়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁদের মতে, অতীতে পরিচালনা পর্ষদে জবাবদিহিতার অভাবের কারণে অনেক ব্যাংক বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের বোঝা বহন করছে। নিয়মিত মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু হলে অনিয়ম প্রতিরোধ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বাড়বে।
অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে, ‘নীতিমালা–২০২৫’ কার্যকর হলে সরকারি ব্যাংকগুলোর সার্বিক প্রশাসনিক কাঠামো আরও দৃঢ় হবে এবং আর্থিক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।