জাতীয় ডেস্ক
ঢাকা, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গণভোটের সময় নির্ধারণের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দেয়। এই মতভিন্নতা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নির্ধারণে ঐক্যমত্যে পৌঁছাবে।
তিনি আরও জানান, এ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তারা আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌথ প্রস্তাব বা সময়সূচি নির্ধারণ করে সরকারকে জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য বিদ্যমান। সনদ বাস্তবায়নের মূল বিষয়গুলো—গণতান্ত্রিক সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা—নিয়ে এখনো একাধিক দলের মধ্যে অবস্থানগত পার্থক্য রয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সময়সূচি ও পদ্ধতি নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, গণভোটের সময় নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থানকে জোরদার করবে। একই সঙ্গে এটি দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে। তবে দলগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে না পারলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হলে সরকার পুনরায় সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে পারে। তবে বর্তমানে সরকারের অবস্থান হলো—গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত, জুলাই সনদটি দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে এক ঐকমত্যভিত্তিক প্রস্তাব হিসেবে গত জুলাই মাসে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপিত হয়। এতে নির্বাচনী কাঠামো সংস্কার, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গঠন ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষার বিভিন্ন প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।