অর্থনীতি ডেস্ক
পে-স্কেল বাস্তবায়নে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পে-স্কেলের জন্য আলাদা কমিশন কাজ করছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার একটি নীতিগত কাঠামো (ফ্রেমওয়ার্ক) তৈরি করে যাবে, যা পরবর্তী সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, পে-স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি বলেছি আমাদের সময়ে এটা করা সম্ভব হবে কি না, সেটা কিছুটা অনিশ্চিত। কারণ পে-কমিশনের তিনটি পৃথক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই ও মিলিয়ে দেখা (রিকনসাইল) করতে হবে। এরপর প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রথমে সচিব কমিটি রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করবে, এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (মোপা) বিষয়টি পরীক্ষা করবে। সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয় মূল্যায়ন শেষে সিদ্ধান্ত দেবে কতটা আর্থিকভাবে সম্ভব। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আমাদের সময়ে এটি পুরোপুরি কার্যকর করা না-ও যেতে পারে। তবে আমরা একটি প্রাথমিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে রেখে যাব, যাতে পরবর্তী সরকার সহজে তা বাস্তবায়ন করতে পারে।”
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনটি রিপোর্ট পাওয়ার পর সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ সেটআপ তৈরি করবে। “আমরা যদি আমাদের মেয়াদের মধ্যে রিকনসাইল করতে পারি, তাহলে সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করব। এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করা,” বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা স্বীকার করেন, পে-স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে বিলম্বের আশঙ্কা থাকায় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে তিনি বলেন, “আমরা এটি সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে শুরু করেছি। সাত থেকে আট বছর ধরে কোনো পে-কমিশন করা হয়নি, অথচ আমরা মাত্র এক বছরের মাথায় উদ্যোগ নিয়েছি। তাই আমাদের প্রতি ক্ষোভ দেখানোর পরিবর্তে ধৈর্য ধরাই যুক্তিসঙ্গত।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “আগামী সরকারকে পে-কমিশনের প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও ব্যয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের সঙ্গে বাজেট ব্যবস্থাপনা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে আমরা একটি বাস্তবসম্মত কাঠামো তৈরি করছি, যাতে পরবর্তী সরকার তা দ্রুত কার্যকর করতে পারে।”
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, নতুন পে-স্কেল প্রবর্তনের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন ইতোমধ্যে তিনটি পৃথক প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন কাঠামো সংশোধন ও আর্থিক সক্ষমতা যাচাই শেষে চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অর্থ বিশেষজ্ঞদের মতে, পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন হতে পারে। এতে সামগ্রিক রাজস্ব নীতি, উন্নয়ন ব্যয় ও বাজেট ঘাটতিতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তবে তারা মনে করেন, একটি সুসমন্বিত কাঠামো তৈরি হলে তা কর্মচারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।