আইন-আদালত ডেস্ক
ঢাকা: ১৯৭৫ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
১৭ নভেম্বর, সোমবার, দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক প্যানেল এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এই প্যানেলে সদস্য হিসেবে ছিলেন। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী রায়ের প্রথম অংশ পাঠ শুরু করেন, এরপর ট্রাইব্যুনাল গঠিত ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় সম্পন্ন করেন।
এই মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পলাতক থাকলেও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে তিনি মামলার অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই কারণে মামলার শুনানি ও রায় ঘোষণার সময় প্রসিকিউশন তার শাস্তি বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন। তবে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এসব অভিযোগের মধ্যে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো অন্তর্ভুক্ত ছিল। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা, যার মধ্যে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে। মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন।
গত ১২ মে, ২০২৫ সালে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের কাছে জমা দেওয়া হয় এবং ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর নির্ধারিত হয়েছিল। রায়ের দিন, সকাল ৯টা ১০ মিনিটে মামুনকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় তার মাথা নিচু ছিল। একই দিনে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়, যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা যায়। পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী সজাগ ছিল।
এই মামলায় ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এছাড়া ৯ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি হয়। প্রসিকিউশন মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করে, তবে সাবেক পুলিশ প্রধান মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল উসকানি ও মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ। এই মামলার রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।