জাতীয় ডেস্ক
দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদা, আনুষ্ঠানিকতা ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। দিনের শুরুতে দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করা হয়, যেখানে জাতীয় কল্যাণ, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকার শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তাঁদের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রতিষ্ঠিত কার্যালয়ে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তীতে বাহিনী প্রধানরা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ১০১ জন নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে শুভেচ্ছা স্মারক বিতরণ করবেন। এই আনুষ্ঠানিকতায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন, জাতীয় নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা বিষয়ক কার্যক্রম এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি তিন বাহিনীর প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিকেল ৪টায় সেনাকুঞ্জে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দেশের প্রশাসন, বিচার বিভাগ, কূটনৈতিক প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ঢাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাঁদের উত্তরাধিকারী, বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনাসদস্যদের পরিবার, বিভিন্ন আন্দোলনে আহত ব্যক্তিসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর ও খুলনাসহ বিভিন্ন এরিয়া সদর দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়ভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌঘাঁটি এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও সমান মর্যাদায় দিবসটি পালন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনীর জাহাজ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে, যা দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নির্ধারিত ঘাটে নোঙর করে থাকবে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় এবং আজ সন্ধ্যায় একটি বিশেষ রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। এ সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও শান্তি রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর অবদান স্মরণ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।