জাতীয় ডেস্ক
ঢাকা, সোমবার, ২৪ নভেম্বর: জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসাথে আয়োজন করলে ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি পাবে, তবে সরকারের বাজেটে তা কোনো সংকট তৈরি করবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এই মন্তব্য করেন সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, তফশিল ঘোষণা করার পর নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হবে। বিশেষ করে স্পর্শকাতর ভোটকেন্দ্রে বডি ক্যামেরা ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসাথে আয়োজন করা একটি চ্যালেঞ্জ হলেও এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা উচিত। বিশ্বের অনেক দেশে একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, পরিশোধিত তেলের আমদানি সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয় কর্তৃক। এতে দেশীয় তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের চাপে সংবেদনশীল প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। তিনি উল্লেখ করেন, চালের দাম যদিও বর্তমানে স্থিতিশীল, তবুও সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নন-বাসমতি চাল আমদানি করা হবে, যা সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টনের মধ্যে হয়।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশের ব্যবসায়ীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার প্রক্রিয়া ভিন্ন। এ ধরনের সমস্যার সমাধান প্রশাসনের চেয়ে রাজনৈতিক সরকারের উদ্যোগের মাধ্যমে কার্যকরভাবে করা সম্ভব।”
নির্বাচন ও গণভোট একসাথে আয়োজনের প্রস্তাবটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একই দিনে ভোটগ্রহণের ফলে নির্বাচন পরিচালনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তদারকি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বিশেষ করে স্পর্শকাতর কেন্দ্রগুলোতে বডি ক্যামেরার ব্যবহার নির্ধারণ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
এছাড়া, দেশের খাদ্য ও জ্বালানি সেক্টরে নীতি ও বরাদ্দ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো বাজার স্থিতিশীলতা ও ক্রেতাদের দামের চাপ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে চালের আমদানি এবং তেলের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে খাদ্য ও জ্বালানি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসাথে আয়োজনের ফলে অতিরিক্ত বাজেট প্রয়োজন হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সঞ্চয় হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচনের স্বচ্ছতা, সুষ্ঠু পরিচালনা এবং ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা অপরিহার্য।
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের সমন্বিত নির্বাচন আয়োজন নীতি নির্ধারণ ও বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকারিতা ও প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রশাসনিক সক্ষমতা, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।