জাতীয় ডেস্ক
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টে জানিয়েছেন, সরকারে যোগদানের পর গত চার দিন তার জন্য “সবচেয়ে অস্বস্তিকর” সময় ছিল। তিনি বাউল শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তার ইস্যুতে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং উল্লেখ করেন, এই সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তের এখতিয়ার তার নয়, বরং তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।
ফারুকী লিখেছেন, আবুল সরকারের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং একটি ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে পরিস্থিতির উত্তাপ ও ঝুঁকির দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত হন। তিনি বলেন, যেকোনো ফৌজদারি অপরাধে পদক্ষেপ নেওয়ার মূল ভূমিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, এবং তিনি তার পক্ষ থেকে যা করতে পারেন তা করছেন। তিনি সকলকে ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করেন এবং বলেন, ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতিই দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি সমালোচনার প্যাটার্নগুলোও তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, কিছু সমালোচনার লক্ষ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, বরং তার নিজের কর্মকাণ্ড। তিনি বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যা করছে তা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর বা প্রভাবিত, এমন দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু সমালোচনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় লালন শাহকে জাতীয়ভাবে সেলিব্রেট করছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধুসঙ্গ আয়োজন করছে, যা বহুত্ববাদের পক্ষে সাংস্কৃতিক অবস্থান প্রদর্শন করে। এছাড়াও, ৫৪ বছরে প্রথমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদ, বৌদ্ধ পূর্ণিমা ও দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে এবং নববর্ষ উদযাপনে সব জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফারুকী বলেন, সরকারী উদ্যোগে লালনের সেলিব্রেশন এবং সাধুসঙ্গের আয়োজনকে কেন্দ্র করে সমালোচনা আসছে, যা তিনি অনভিপ্রেত এবং ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বাউলদের ওপর অতীতের আক্রমণ ও নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরেন, যেখানে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাউলদের ওপর হামলা, বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বাউল ও লোকসংস্কৃতির প্রতি সমর্থন এবং সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
তিনি ড্রোন শোসহ নতুন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্পর্কেও মন্তব্য করেছেন। ফারুকী বলেন, বড় আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে ড্রোন শো একটি নতুন নিয়মিত উপকরণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে, এবং বাংলাদেশেও এমন আয়োজন সম্প্রসারিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস, পূজা ও সাংস্কৃতিক উৎসবগুলিতে ড্রোন শো এখন নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এটি চলবে।
ফারুকী পোস্টে সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের সাংস্কৃতিক উদ্যোগ এবং তার কর্মকাণ্ডকে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক আক্রমণের আঙ্গিকে দেখতে হলে অনেকে ভুলভাবে নেবেন, যা তিনি আশা করছেন বন্ধ হবে। তিনি বলেন, ইতিহাস যাচাই-বাছাই ও নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টা দেশের সাংস্কৃতিক অগ্রগতিকে সমর্থন করে।