নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, সোমবার, ২৪ নভেম্বর: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সফল আয়োজন নিশ্চিত করতে কমনওয়েলথের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন। তিনি এই সংক্রান্ত আলোচনা করেন কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি বচওয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকে, যা অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মহাসচওয়কে দেশের নির্বাচনের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন যে নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করা হবে।
জবাবে কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি বচওয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেন যে, কমনওয়েলথ বাংলাদেশের নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী রূপান্তরের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করবে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথের ৫৬টি দেশের মধ্যে জি-৭ ও জি-২০’র সদস্যরাও রয়েছে, যাদের হাতে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এই দেশগুলো একে অপরকে শক্তিশালী করতে সেই সম্পদ ব্যবহার করতে পারে, যা বাংলাদেশের নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে।
মহাসচিব আরও জানান, তিনি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক এবং প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা নেওয়া হয়েছে।
কমনওয়েলথ মহাসচিব নিশ্চিত করেন, নির্বাচনের আগে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর জন্য কমনওয়েলথ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পর্যবেক্ষক দল নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, অবাধতা ও গ্রহণযোগ্যতা পর্যবেক্ষণ করবে। মহাসচিবের এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্তরে শুরু হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচন কেন্দ্র প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সমন্বয় নিয়ে কাজ করছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা হবে, যাতে দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয়।
কমনওয়েলথের পর্যবেক্ষণ ও সমর্থন নির্বাচন প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক ভাবমূর্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা ও বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা সম্ভব হবে। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে এবং রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হবে।
অপরাপর দিকে, কমনওয়েলথের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।