নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) তিনি ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার বিষয়ে তার অবস্থান ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমানের বক্তব্যে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে নেওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেছেন, যে কারণে সাধারণ মানুষ নানা সংকটের মধ্যে পড়ে, সেই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় তাদের মতামত জানানো হয়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের সময়সূচি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নৌপরিবহন ব্যবস্থার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি তার পোস্টে উদাহরণ দিয়ে জানান, গাজীপুরের একটি ছোট পোশাক কারখানার মালিক দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, কিন্তু শুল্ক সুবিধা হঠাৎভাবে বন্ধ হওয়ায় ক্রমেই ক্রয়াদেশ কমছে এবং শ্রমিকদের বেতন প্রদানে চাপ বেড়েছে। অনুরূপভাবে, নারায়ণগঞ্জের একজন তরুণ স্নাতক দেখেছেন, তার পরিবার কারখানার শ্রমিক হিসেবে রপ্তানির চাপে ওভারটাইমের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য। এই ধরনের পরিস্থিতি সংবাদ শিরোনামে আসে না, তবে এগুলো দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার অংশ।
তারেক রহমান আরও বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সূচি এগিয়ে নেওয়া একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটি একটি অন্তর্বর্তী সরকার করছে, যার কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট নেই। এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দেশের অর্থনীতিকে বহু দশক ধরে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী অর্থনৈতিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে সময়সীমা নিয়ে নমনীয়তা দেখানো সম্ভব। তাই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা এবং জনমতের প্রতিফলন অপরিহার্য।
বিএনপির শীর্ষ নেতা চট্টগ্রাম বন্দরের প্রসঙ্গও তুলে ধরে বলেন, বন্দরের যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো লাখ লাখ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এসব কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়মিত কাজের অংশ নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রভাবিত করবে। জনগণের যৌক্তিক উদ্বেগগুলো উপেক্ষা করে দ্রুততার আভাস দেখানো হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক স্বীকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, দেশের ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই ব্যাংকিং খাতে চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা, ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং রপ্তানি শ্লথ হওয়ার সমস্যার মুখোমুখি। তিনি বলেন, উত্তরণে যোগ্য হওয়া এবং প্রস্তুত হওয়া দুটি ভিন্ন বিষয়। দেশের অর্থনৈতিক শক্তি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ, নীতি রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলগত ধৈর্য গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মতামত গ্রহণ এবং গণতান্ত্রিক বৈধতার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে দেশের দীর্ঘমেয়াদি শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হবে। তার মতে, অনির্বাচিত সরকার এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, এবং দেশের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তারেক রহমান তার ফেসবুক পোস্টে জোর দিয়ে বলেন, দেশের মানুষ সবসময় তাদের মর্যাদা, মতপ্রকাশ এবং পছন্দ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেছে। তাই ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা উচিত।