অর্থনীতি ডেস্ক
ঢাকা, শনিবার, ২৯ নভেম্বর: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশে ডলারের কোনো সংকট নেই এবং আগামী রমজানে পণ্যমূল্য পরিশোধে কোনো শঙ্কা নেই। তিনি আরও জানান, দেশের এক্সটারনাল সেক্টর স্থিতিশীল রয়েছে এবং ব্যাংকিং খাতে ডলারের অভাব নেই। যেকোনো পরিমাণ ডলার বাংলাদেশি টাকা নিয়ে বিনিময় করা সম্ভব হবে।
ঢাকার একটি হোটেলে চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানান, গত বছর রমজানে পর্যাপ্ত ফরেন এক্সচেঞ্জ দিয়ে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা সম্ভব হয়েছিল এবং চলতি বছরের রমজানেও বাংলাদেশ কোনো ধরনের ত্রুটির মুখে পড়বে না। রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ইতিমধ্যেই এলসি খোলার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
গভর্নর বলেন, চলতি অর্থবছরে এলসি খোলার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে এলসি খোলার বৃদ্ধি গত বছরের সমান সময়ের তুলনায় ১৫ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে হয়েছে। তিনি বলেন, “এলসি ওপেনিংয়ের এই বৃদ্ধি নিশ্চিত করছে যে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত হবে না।”
চালের উচ্চমূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি এখনও বেশি থাকার বিষয়েও মন্তব্য করেন তিনি। গভর্নর বলেন, নীতিগত কিছু ব্যর্থতার কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, শুধু চালের দাম ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত মাসে মূল্যস্ফীতি ১.৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি হয়েছে। তিনি আরও জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরি। আমদানি বন্ধ রাখলে দাম বাড়বে, এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দাম কমলেও বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না।
বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপকে দায়ী করেন। গভর্নর বলেন, “যখন চালের আমদানি খুলে দেওয়া হয়েছে, তাতে বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যায়নি।”
এছাড়া, আমানতের হার বৃদ্ধির বিষয়েও মন্তব্য করেন গভর্নর। তিনি জানান, আমানতের হার বর্তমানে ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সঞ্চয়কারীদের জন্য সুদের আয়ের সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, দেশের অর্থনৈতিক নীতি এবং ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট পরিস্থিতি রমজানের আগেই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ডলার সরবরাহ, এলসি খোলা এবং আমানতের হার বৃদ্ধি—all মিলিয়ে চলতি বছরের রমজান অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সমন্বয় এবং আমদানি ব্যবস্থার প্রভাব একাধিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করছে। সরকারের নীতি ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করতে পারলে, দেশের ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য রমজানকালে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।