নিজস্ব প্রতিবেদক
রোববার (৩০ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত যেসব আইনগত উপায় সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী উপলব্ধ, সেগুলো অনুসরণ করা হবে। তবে কোনো বিচারপ্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করা বা রাষ্ট্রকে সংশ্লিষ্ট সময়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি বাংলাদেশ হিসেবে উপস্থাপন করা, যা ১৪০০ জনের রক্তদান, প্রায় ২৫ হাজার জনের অঙ্গহানি এবং অসংখ্য মানুষের আঘাত ও কষ্টের ফলাফল, তাকে ‘সো-কলড’ বলা আদালত অবমাননার শামিল এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে। তিনি বলেন, আদালতে এমন বক্তব্য রাখার অধিকার কোনো আসামির নেই।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল সংবিধানের অধীনে প্রতিষ্ঠিত এবং আইন দ্বারা সুরক্ষিত। কোনো আসামি আইনকে বা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখেন না। তবে আইনগত অধিকার অনুসারে আসামি সাক্ষ্য প্রদান, প্রসিকিউশনের প্রমাণ চ্যালেঞ্জ করা এবং পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন।
একই দিনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর রিভিউ আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২ এর দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল, যার নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছি এবং অন্য সদস্য জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর, এই আদেশ দেন। এরপর চিফ প্রসিকিউটর ইনুর বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও সিফাত মাহমুদ।
গত ২৭ নভেম্বর ইনু জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘সো-কলড’ বলে বিচার শুরুর আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছিলেন। প্রসিকিউশন তার এই মন্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দেখিয়ে আবেদন বাতিলের প্রস্তাব দেন। আদালত আজ এই আবেদন খারিজ করেন।
এর আগে ২ নভেম্বর, ইনুর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। ওই দিনে অভিযোগ উপস্থাপন এবং সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়। অভিযোগগুলোই প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়। শুনানিতে নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করেন ইনু। প্রসিকিউশন উল্লেখ করে, ১৪-দলীয় জোটের শরিক নেতা হিসেবে ইনু দায় এড়াতে পারবেন না।
চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রসিকিউশন ইনুর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় সহযোগিতা এবং অন্যান্য অপরাধ সংক্রান্ত আটটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়ে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। এরপর অভিযোগ উপস্থাপন এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত দিন নির্ধারণ করে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করে।
গত বছরের ২৬ আগস্ট, রাজধানীর উত্তরা থেকে ইনুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণকালে, তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ায় নিজের আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে হেরে যান।
উল্লেখযোগ্যভাবে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকালে কুষ্টিয়া শহরে শ্রমিক ও শিক্ষার্থিসহ অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের হয়। তদন্ত শেষে প্রসিকিউশন উসকানি ও ষড়যন্ত্রসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ আনে। অভিযোগে ২০ জন সাক্ষী এবং তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও প্রমাণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।