জেলা প্রতিনিধি
গাজীপুরে সোমবার (১ ডিসেম্বর) ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আগুনে চারটি তুলার গুদাম, একটি ঝুটের গুদাম এবং একটি টিনশেড কলোনি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, কোনো হতাহত হয়নি, তবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের সূত্রে জানা গেছে, ভোর ৫টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী মাঝুখান এলাকায় একটি তুলার গুদামে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আরও দুটি গুদামে। স্থানীয়রা খবর দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে তিনটি গুদামের সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এর কিছু সময় পর গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানার আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকায় পলাশ মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর ঝুট গোডাউনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে গোডাউনের সমস্ত মালামাল ধ্বংস হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালিয়াকৈর পৌরসভার চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় দিঘির পাড়ের একটি টিনশেড কলোনিতে আগুন লাগে। আগুনে কলোনির ৮০টি কক্ষ পুড়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, সকালে বাসিন্দারা বিভিন্ন কর্মস্থলে চলে যাওয়ায় কেউ আহত হয়নি। একটি কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং আশপাশের লোকজন আগুন দেখে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মামুন জানিয়েছেন, ভোর থেকে শহরে তিনটি আগুনের ঘটনা ঘটেছে এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সব স্থানের আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কোনো হতাহতের তথ্য নেই। তবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য তদন্ত চলছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে সাধারণত বিদ্যুৎ সংযোগের ত্রুটি, তামাকজাত দ্রব্য বা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত সর্কিটসহ বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ গুদাম ও কলোনিগুলোতে নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব এ ধরনের ঘটনা বাড়াচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের জন্য দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে আরও প্রস্তুত রাখা এবং আগুন লাগার ঝুঁকি কমাতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প ও আবাসিক এলাকায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার শক্তিশালী করার বিষয়টি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।
এই তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ফলে স্থানীয় অর্থনীতি ও বসবাসকারীদের জীবনে প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে তুলা ও ঝুটের ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে নিয়মিত তদারকি চালানোর আশ্বাস দিয়েছে।
উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মামুন আরও জানিয়েছেন, সকল স্থানেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চূড়ান্তভাবে নিরূপণ করা হয়নি। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, সামান্য দিনের ব্যবধানে ঘটানো এই আগুনগুলোতে কয়েক কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।