নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. আমির হোসেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই নিয়োগের আদেশ দেন। এর আগে এই দুই মামলায় শেখ হাসিনার আইনজীবী ছিলেন জেড আই খান পান্না। গত ২৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল তাকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেড আই খান পান্না নিজেকে হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হতে অক্ষম মনে করে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি পাঠান এবং দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করেন। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে জানানো হলে বিচারপতিরা মো. আমির হোসেনকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন।
আজ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি পরিচালনা করেন। শুনানিতে অন্যান্য প্রসিকিউটর এবং আসামী পক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
দুই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ৮ অক্টোবর এই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ১১ অক্টোবর সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায়। আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান জানান, মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর সাবেক বা বর্তমান কর্মকর্তা। এদের মধ্যে নয়জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং ১৫ জন বর্তমানে কর্মরত।
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে, ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪১(১) এবং দি প্রিজন অ্যাক্টের ধারা ৩ এর বি অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪ কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো। গ্রেফতারকৃত সেনা কর্মকর্তাদের পরবর্তীতে এই কারাগারে রাখা হয়।
মামলাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতাধীন থাকায় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর নিয়োগের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নিশ্চিত হওয়ায় এই মামলার শুনানি আরও গতিশীল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় আসামি ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা নিয়মিত উপস্থিত থাকবেন এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।