খেলাধুলা ডেস্ক
দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলে ইনজুরিজনিত সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে চলমান ভারত সিরিজে। শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচের আগেই হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নান্দ্রে বার্গার ও টনি ডি জর্জি। স্ক্যান রিপোর্টে তাদের ইনজুরির মাত্রা নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবারই প্রোটিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট বাধ্য হয়ে দু’জনকেই সিরিজের শেষ ওয়ানডে থেকে বাদ দেয়।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলিং করার সময় ডান হ্যামস্ট্রিংয়ে অস্বস্তি অনুভব করেন বামহাতি পেস বোলার নান্দ্রে বার্গার। ইনজুরির কারণে তিনি পুরো স্পেল শেষ করতে না পারার পাশাপাশি ম্যাচের পরও ব্যথা বাড়তে থাকে। অন্যদিকে একই ম্যাচে রান তাড়ার সময় হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন টনি ডি জর্জি। ব্যাট করতে করতে মাঝপথে থেমে যেতে বাধ্য হন তিনি এবং এরপর চিকিৎসক দলের পরামর্শে অবিলম্বে মাঠ ছাড়েন।
ডি জর্জির চোট আরও জটিল আকার ধারণ করায় তার জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে। শুধু শেষ ওয়ানডে নয়, ভারতের বিপক্ষে আসন্ন পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজ থেকেও তাকে ছিটকে যেতে হয়েছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে সিরিজটি, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপে ডি জর্জি ছিলেন সম্ভাব্য শুরুর দিকের পছন্দ। কিন্তু ইনজুরির মাত্রা বিবেচনা করে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে দেশেই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তার পরিবর্তে কে দলে সুযোগ পাবেন, সে বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
বার্গারকে হারানো দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণের জন্য বড় ধাক্কা। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তিনি গতি ও বাউন্স দিয়ে ভারতীয় ব্যাটারদের চ্যালেঞ্জ জানান। বিশেষ করে নতুন বলে তার ধারাবাহিকতা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইনজুরির কারণে তাকে বিশ্রামে পাঠানো হওয়ায় তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের পেস কম্বিনেশনে পরিবর্তন আনতে হবে। দলের অন্য পেসারদের ওপর দায়িত্ব বাড়বে, বিশেষ করে ম্যাচের শুরুতে উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে।
টনি ডি জর্জির অনুপস্থিতিও ব্যাটিং অর্ডারে স্পষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি ছিলেন দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার। শুরুর দিকে ইনিংস গড়ে তোলার পাশাপাশি মাঝের ওভারে চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা দক্ষিণ আফ্রিকার কৌশলের অংশ ছিল। টি২০ সিরিজেও তার অনুপস্থিতি ব্যাটিং ব্যালান্সে পরিবর্তন আনবে, যা ভারতের বিপক্ষে প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্স বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
ইনজুরির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে যে পরিবর্তন আসছে, তা দলের সামগ্রিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে। সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াই ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এমন অবস্থায় অভিজ্ঞতা ও ফর্মে থাকা দুই ক্রিকেটারের অনুপস্থিতি দলের মনোবলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যবস্থাপনা জানিয়েছে, দুই ক্রিকেটারের ইনজুরি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। চিকিৎসক দলের প্রাথমিক পর্যালোচনায় ধারণা করা হচ্ছে, ডি জর্জির পুনর্বাসন বার্গারের তুলনায় বেশি সময় লাগতে পারে। আগামী আন্তর্জাতিক সূচি বিবেচনায় তাদের সুস্থ হয়ে ফেরাটা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ভারত সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সিরিজ নির্ধারণে এই ম্যাচের ফলাফল বড় ভূমিকা রাখবে। দলে পরিবর্তনের ফলে নতুন খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রমাণের সুযোগ তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে দলীয় পরিকল্পনা সামঞ্জস্য করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে, বিশেষ করে বোলিং ও ব্যাটিং দু’দিকেই।
দলের কোচিং স্টাফ জানিয়েছেন, ইনজুরি পরিস্থিতি সত্ত্বেও দল প্রতিযোগিতায় মনোযোগ ধরে রাখবে এবং যথাসম্ভব শক্ত লড়াই উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবে। নতুন করে সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড়রা যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী ম্যাচগুলোতে দল কী কৌশল নেয়, তা দেখতে হবে। তবে সিরিজের মধ্যভাগে এমন ইনজুরি সঙ্কট দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।