খেলাধুলা ডেস্ক
রিয়াল বেটিসের মাঠে লা লিগার ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত বড় জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। ফেররান তোরেসের হ্যাটট্রিক ও আক্রমণভাগের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে কাতালান দল ৫–৩ ব্যবধানে জয়ের মাধ্যমে পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের শীর্ষস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে। ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের আক্রমণাত্মক খেলায় গোলের দেখা পাওয়া গেলেও, শেষ মুহূর্তে বেটিসের দুই গোল ব্যবধান কমাতে সাহায্য করলেও জয় নিশ্চিত হয় বার্সার পক্ষেই।
ম্যাচের ছয় মিনিটের মাথায় স্বাগতিক বেটিস প্রথম গোল করে এগিয়ে যায়। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড অ্যান্তোনি ডি বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া শটে দলকে এগিয়ে দেন। অপ্রত্যাশিত এই গোল বার্সেলোনাকে ম্যাচের শুরুতেই চাপের মুখে ফেলে দিলেও, দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় অতিথিরা। আক্রমণ সাজিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে ম্যাচে ফেরে বার্সা। ১১তম মিনিটে জুলস কুন্দের পাস থেকে বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়ে গোল করেন ফেররান তোরেস। দুই মিনিট পর রুনি বার্দগির ক্রস থেকে ভলিতে আরেকটি গোল করেন এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড, যা ম্যাচের গতি পাল্টে দেয়।
৩১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে বার্সেলোনাকে আরও স্বস্তি এনে দেন তরুণ উইঙ্গার রুনি বার্দগি। পেদ্রির থ্রু পাস ধরে তিনি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন এবং জাল খুঁজে পান। বল পজেশনে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বেটিসের ডিফেন্সিভ দুর্বলতা বার্সার আক্রমণকে ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছিল। প্রথমার্ধেই আরও একটি গোল পেয়ে যান তোরেস, যা তার হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করে। দূরপাল্লার নেওয়া শটটি ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে জড়িয়ে পড়ে, ফলে প্রথম ৪৫ মিনিটেই বার্সেলোনা ৪–১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধেও বার্সেলোনা আক্রমণ অব্যাহত রাখে। প্রতিপক্ষ বক্সে হ্যান্ডবল থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে ১৮ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল শীতল মাথায় গোল করে ব্যবধান ৫–১ করেন। তরুণ এই ফরোয়ার্ড পুরো ম্যাচে সক্রিয় ছিলেন এবং আক্রমণভাগে ধারাবাহিক গতিবেগ বার্সার গোলের সুযোগ তৈরি করে। তবে ব্যবধান বড় হলেও বেটিস ম্যাচ থেকে সরে যায়নি। গোলরক্ষক আন্দ্রেয়া পিরোর বেশ কয়েকটি সেভের কারণে বার্সা আর গোল না পেলেও আক্রমণাত্মক খেলায় সুবিধা ধরে রেখেছিল।
ম্যাচের শেষ সময়ে স্বাগতিক দল কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ৮৫তম মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া সুযোগে দিয়েগো লরেন্ত হেডে গোল করে ব্যবধান কমান। এরপর যোগ হয়ে যাওয়া সময়ের মধ্যে কুন্দের ফাউল থেকে পাওয়া পেনাল্টি সফলভাবে গোল করে কুচো হার্নান্দেজ। টানা দুই গোল পেয়ে বেটিস ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা দেখালেও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে বার্সেলোনার বড় ব্যবধান ধরে রাখাই সম্ভব হয়।
পুরো ম্যাচে বল দখলে এগিয়ে থাকলেও শট নেওয়ায় বেটিস ছিল সামান্য এগিয়ে। স্বাগতিকরা মোট ১৬টি শট নেয়, যার ১০টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে বার্সেলোনা ১৩টি শটের মধ্যে ৮টি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়। তবে আক্রমণভাগে দক্ষ সমন্বয় ও সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষমতায় বার্সাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।
এই জয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে বার্সেলোনার সংগ্রহ দাঁড়ালো ৪০ পয়েন্টে। লিগ টেবিলে এই অবস্থান তাদের শীর্ষস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে। অপরদিকে, এক ম্যাচ কম খেলা রিয়াল মাদ্রিদ ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। লিগের বর্তমান পরিস্থিতিতে বার্সেলোনার এই ধারাবাহিকতা শিরোপা দৌড়ে তাদের অবস্থান মজবুত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মৌসুমের মধ্যভাগে এসে বার্সেলোনার এই জয়ের ধারাবাহিকতা তাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াবে। সামনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে দলীয় সমন্বয়, আক্রমণভাগের কার্যকারিতা এবং তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স লিগের প্রতিযোগিতায় বড় ভূমিকা রাখবে। ম্যাচটিতে তোরেসের হ্যাটট্রিক ও তরুণদের অবদান দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতেও আশার সঞ্চার করছে। অতি দ্রুত পিছিয়ে থেকেও ম্যাচে ফেরার সক্ষমতা দলটির মানসিক দৃঢ়তার প্রতিফলন, যা লিগে তাদের পরবর্তী পথচলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।