জেলা প্রতিনিধি
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে আঞ্চলিক মহাসড়কে দ্রুতগতির বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ফারহান শাহরিয়ার বিজয় (১৭) নামে এক স্কুলছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কাটালী এলাকায় ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় বিজয়ের ডান হাত কাঁধ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মোটরসাইকেলের আরেক আরোহীও গুরুতরভাবে আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ী থেকে কুমিল্লাগামী একটি মোটরসাইকেল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আঞ্চলিক মহাসড়কের কাটালী এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকামুখী একটি বাস সেটিকে মুখোমুখি ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের ফলে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে গুরুতর জখম হন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাসটির অতিরিক্ত গতি এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আহত বিজয় সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের দেওটি গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসকদের প্রাথমিক মূল্যায়নের পর বিজয়ের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। মোটরসাইকেলের অপর আরোহীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী জানান, বিজয়কে হাসপাতালে আনার সময় তার ডান হাত কাঁধ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। জরুরি চিকিৎসা শেষে তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত অপর তরুণকেও হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং তার অবস্থাও গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া হওয়ায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় শোক ও উদ্বেগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল, অপর্যাপ্ত তদারকি এবং নির্দিষ্ট গতিসীমা বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন। এলাকাবাসীর দাবি, এই সড়কে নিয়মিত ট্রাফিক নজরদারি, গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং সিসিটিভি নজরদারি বাড়ালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন জানান, সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ তাদের প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছে। তিনি বলেন, একটি বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহীর হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনও এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে বাসটি সরে যাওয়ায় এখনো এর পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে এবং অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ এবং সম্ভাব্য সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। বাসটির পরিচয় শনাক্তে আশপাশের পরিবহন কাউন্টার ও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তদন্তের অংশ হিসেবে সড়কের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং সড়কের অবকাঠামোগত অবস্থাও পর্যালোচনা করা হবে।
সোনাইমুড়ী ও আশপাশের এলাকায় এমন দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সড়কে নিয়মিত টহল, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিও সড়ক নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিজয়ের চিকিৎসার অগ্রগতি এবং তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে ঢাকার চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর থেকে পরিবারটি গভীর উদ্বেগে রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত তদন্ত শেষে দায়ী বাস চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিছুটা হলেও কমবে।
ঘটনার তদন্ত ও আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বাসটি সড়কে অতিরিক্ত গতি নিয়ে চলছিল। তবে তদন্ত শেষে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং দায়ী পক্ষ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে তারা আশাবাদী।