অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের খুচরা মূল্য সমন্বয় করেছে উৎপাদন ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত নতুন মূল্য সোমবার, ৮ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে কার্যকর হয়েছে।
রবিবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন থেকে জানানো হয়, বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এর ফলে বোতলজাত ও খোলা উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা খুচরা বাজারে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
নতুন সমন্বয় অনুযায়ী লিটারে ৬ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৫ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৫৫ টাকা, যা পূর্বের তুলনায় হিসাব করে বাড়ানো হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলেও সমন্বয় করা হয়েছে; নতুন খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি নির্ধারিত হয়েছে ১৭৬ টাকা। এসব দাম এখন থেকে বাজারে কার্যকর থাকছে এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা নতুন মূল্য অনুযায়ী বিক্রি করবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে গত কয়েক মাসে ভোজ্যতেলের কাঁচামাল—বিশেষ করে সয়াবিন ও পাম তেলের—মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে ওঠানামা করছে। বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ ব্যয়ের বৃদ্ধিও দেশের বাজারে প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে মূল্য সমন্বয় না করলে আমদানি নির্ভর এ খাতে উৎপাদন ও বাজার সরবরাহে চাপ পড়ত বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন। নতুন দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, শুল্ক, পরিবহন ব্যয় এবং স্থানীয় উৎপাদন খরচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববাজারের মূল্য ওঠানামা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের ভোজ্যতেল বাজারকে প্রভাবিত করছে। সয়াবিন ও পাম তেলের বড় অংশ দেশের প্রয়োজন মেটাতে আমদানি করতে হয়। ফলে বৈশ্বিক পরিবেশ, ডলারের বিনিময় হার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ সংকট বা ব্যয় বৃদ্ধি সরাসরি দেশীয় বাজারে প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বাড়ায় দেশীয় বাজারেও তা প্রতিফলিত হয়েছে।
নতুন দাম কার্যকর হওয়ায় খুচরা বাজারে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল অন্যতম হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি সাধারণ ভোক্তার ব্যয়ের উপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলো মাসিক বাজেট প্রণয়নে অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ অনুভব করতে পারেন। ভোক্তাদের অনেকে ইতোমধ্যে বাজারে গিয়ে নতুন দামের প্রভাব দেখছেন এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে এ চাপ বাড়বে বলে তাদের আশঙ্কা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, নতুন মূল্য কার্যকর হলেও বাজারে চাহিদা বড় ধরনের কমে যাবে না, কারণ ভোজ্যতেল দৈনন্দিন রান্নায় অপরিহার্য একটি পণ্য। তবে কিছু ক্রেতা হয়তো ৫ লিটারের বড় বোতলের পরিবর্তে ছোট লিটার বা খোলা তেলের দিকে ঝুঁকতে পারেন। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে ভবিষ্যতে আবারও দাম কমানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সরকারি সংস্থাগুলো জানায়, বাজারের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে মূল্য স্থিতিশীল হলে বা কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় কমলে পুনরায় সমন্বয়ের সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত বাজার তদারকি চালানো হবে।
এদিকে সাধারণ ভোক্তারা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির উন্নতি এবং পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। তারা আশা করছেন, বাজারমূল্যের ওপর নজরদারি আরও জোরদার হলে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বা মজুতদারি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
সামগ্রিকভাবে, ভোজ্যতেলের নতুন মূল্য সমন্বয় দেশের বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেললেও ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীলতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৈশ্বিক বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে ভোক্তারা আবারও স্বস্তি পেতে পারেন। তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বাজারে মূল্য বাড়তি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।