আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় নতুন করে প্রাণহানি বাড়ছে। স্থানীয় সময় অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত এই হামলায় কমপক্ষে ৩৭৩ জন নিহত ও ৯৭০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলমান সংঘাত ও সীমিত মানবিক সহায়তার কারণে অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা চরম সংকটে পড়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল নতুন করে ছয়জন নিহতের মরদেহ গ্রহণ করেছে। একই সময়ে আহত অবস্থায় আরও ১৭ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানায়, হামলার ধরন ও ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় নিখোঁজ মানুষের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা অনেক মানুষের তথ্য এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলার পর গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৩৬০ জনে। একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৭ জন। দীর্ঘসময় ধরে চলমান সংঘাতের ফলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, অবকাঠামো, এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিদিনই আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
স্বাস্থ্য খাতের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রীর ৫০ শতাংশের বেশি এখনো গাজায় মজুত নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে হাসপাতালগুলো নিয়মিত জরুরি সেবা, অস্ত্রোপচার, নিবিড় পরিচর্যা এবং সাধারণ চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে গুরুতর সংকটে পড়ছে। অনেক হাসপাতাল আংশিকভাবে কার্যকর, আবার কিছু হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্যসেবায় গুরুতর ঘাটতি এবং নিরাপদ চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে গাজায় আহত ও অসুস্থ মানুষের প্রকৃত চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে নেওয়া গেলেও, সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা এবং যানবাহন সংকটের কারণে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে গাজায় চিকিৎসা সামগ্রী, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং আশ্রয়ের তীব্র ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করে আসছে। যুদ্ধবিরতি থাকা সত্ত্বেও এসব সহায়তা প্রবেশে নানা সীমাবদ্ধতা ও বিলম্ব ঘটছে। মানবিক করিডোর ও সরবরাহ লাইন পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা গুরুতর সংকটে রয়েছে। সহায়তার এই ঘাটতি শিশু, বৃদ্ধ এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা মানুষের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করছে।
জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে গাজার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যুহার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে চিকিৎসকেরা। বিশেষ করে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট, অস্ত্রোপচার কেন্দ্র এবং জরুরি বিভাগগুলোতে রোগীর চাপ দ্রুত বাড়ছে। অনেক চিকিৎসক দীর্ঘ সময় ধরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে এবং ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত হামলা ও মানবিক সহায়তার সীমাবদ্ধতা গাজায় স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘায়িত করছে। অবকাঠামো, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত পুনর্গঠন ছাড়া সামগ্রিক মানবিক সংকট কমানোর কোনো কার্যকর উপায় নেই। আগামী দিনে সংঘাতের গতিপ্রকৃতি, আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহ পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।