আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মালদ্বীপের পুলিশ কমিশনার ইসমাইল নাভিনের সঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. নাজমুল ইসলামের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক পুলিশ সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্য বিনিময়কে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) মালদ্বীপ পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভবিষ্যৎ সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বৈঠকে মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের পুলিশ বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা গড়ে তুলেছে। এই সম্পর্ককে আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও ফলপ্রসূ করতে উভয় পক্ষই প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, অপরাধ দমন কৌশল, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিভিত্তিক পুলিশ কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা আদান–প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে। বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের পেশাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ ও সমন্বিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ হাইকমিশনার বৈঠকে জানান, দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ, প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ও পারস্পরিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবপাচার প্রতিরোধ, কর্মী সুরক্ষা, সাইবার অপরাধ দমন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিজ্ঞতা বিনিময় দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিতে সহায়ক হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে মালদ্বীপের পুলিশ কমিশনার দুই দেশের দীর্ঘ সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও এই সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পুলিশিং পদ্ধতির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারে যৌথ উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিস এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে আলোচনা হয়, মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখার গুরুত্ব নিয়ে। বাংলাদেশ মালদ্বীপে সবচেয়ে বড় প্রবাসী জনশক্তি সরবরাহকারী দেশগুলোর একটি হওয়ায় তাদের আইনগত সহায়তা, সুরক্ষা এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়মিত সমন্বয় প্রয়োজন বলে উভয় পক্ষ মতামত প্রকাশ করে।
এ ছাড়া অপরাধ দমন ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, যৌথ প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন, পুলিশের ট্যাকটিক্যাল ইউনিটের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি এবং সামুদ্রিক সীমান্তে সম্ভাব্য অপরাধ মোকাবিলায় সমন্বয় জোরদারের সম্ভাবনাও আলোচনায় উঠে আসে। দুই দেশের পুলিশ বাহিনী মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, মানবপাচার, মাদক চোরাচালান এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করা সময়ের দাবি।
দীর্ঘমেয়াদে এমন সহযোগিতা দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আধুনিক, দক্ষ ও পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিভিত্তিক অপরাধ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়নকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক পুলিশি প্রশিক্ষণ, অপরাধ বিশ্লেষণ, অপরাধস্থল ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল ফরেনসিকস এবং জরুরি সাড়া প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার বিষয়ে উভয় দেশ আগ্রহ প্রকাশ করে।
বৈঠক শেষে দুই পক্ষই ভবিষ্যতে পুলিশ সহায়তা এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিস জানায়, এই সহযোগিতা শুধু দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকেই শক্তিশালী করবে না, বরং বিস্তৃত নিরাপত্তা কৌশল ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে।