বিনোদন ডেস্ক
বলিউডের কিংবদন্তী অভিনেতা ধর্মেন্দ্র প্রয়াত হওয়ার পর প্রথমবার তাঁর জন্মদিন এল নীরবতা ও শোকের আবহে। ৮ ডিসেম্বর জীবনের নব্বইতম বর্ষপূরণ করার কথা থাকলেও প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মৃত্যুবরণ করায় দিনটি পরিণত হয়েছে স্মৃতিচারণার মুহূর্তে। এ উপলক্ষে অভিনেতা ধর্মেন্দ্রকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগপূর্ণ বার্তা দেন তাঁর স্ত্রী ও বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেত্রী হেমা মালিনী।
ধর্মেন্দ্র দীর্ঘ অভিনয়জীবনে জনপ্রিয়তা, বহুমাত্রিক চরিত্রে দক্ষতা এবং বলিউডে বিশেষ প্রভাবের কারণে দর্শকদের কাছে ‘হি-ম্যান’ নামে পরিচিত ছিলেন। কয়েক দশকব্যাপী ক্যারিয়ারে তিনি রোমান্টিক, অ্যাকশন ও সামাজিক বিভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্রে সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর অভিনীত বহু চলচ্চিত্র ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন এক বৃহৎ পরিবারের কর্তা এবং চলচ্চিত্র অঙ্গনের ভেতরে–বাইরে তাঁর সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও মানবিক আচরণ বিশেষভাবে আলোচিত ছিল।
ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনীর সম্পর্ক বলিউডে বহু বছর ধরেই আলোচনা ও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। অভিনয়জীবনে পাশাপাশি কাজ করতে করতেই তাদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। জীবনের একটি পর্যায়ে ধর্মেন্দ্র প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরকে তালাক না দিয়েই ধর্ম পরিবর্তন করে হেমাকে বিয়ে করেন। এই সিদ্ধান্ত তাঁদের পারিবারিক জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করলেও উভয়ে তাঁদের সম্পর্ক ও সন্তানদের লালন–পালনে অটল ছিলেন। দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘ পথচলায় এই দম্পতি নিজেদের কর্মজীবন, পরিবার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক সামঞ্জস্য রেখে কাটিয়েছেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর জন্মদিন ঘিরে হেমা মালিনী স্বাভাবিকভাবেই আবেগাপ্লুত হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, স্বামীকে হারানোর বেদনা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি এবং এই শূন্যতা তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ধর্মেন্দ্রের ভালোবাসা, স্মৃতি ও তাঁদের দু’সন্তানই এখন তাঁর মানসিক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করছে। হেমা মালিনীর মতে, স্বামীর স্মৃতি তাঁর জীবনের ভবিষ্যৎ পথচলায় স্থায়ী অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
হেমা মালিনী আরও জানান, দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে তাঁরা একসঙ্গে সুখ–দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন এবং ধর্মেন্দ্র তাঁর কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও পরিবারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বিশ্বাস করেন, স্বামীর আত্মা সবসময় তাঁর সঙ্গে থাকবে এবং পরিবারের প্রতি ধর্মেন্দ্রের যে মায়া–মমতা ছিল, তা সন্তানদের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। হেমা মালিনীর বার্তায় স্বামীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্মৃতির আবেগ সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
ধর্মেন্দ্রের প্রথম পরিবারের সন্তানরাও বাবার স্মরণে বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করেছেন। সানি দেওল ও ববি দেওল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখেন, তাঁরা প্রতিদিনই বাবাকে মনে করেন এবং তাঁর শেখানো মূল্যবোধ অনুসরণ করে জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন। ধর্মেন্দ্রের দুই কন্যা—ঈশা দেওল ও অহনা দেওল—তাঁদের বাবার মৃত্যুর পর পরিবারকে কেন্দ্র করে থাকার চেষ্টা করছেন এবং বাবার স্মৃতি তাঁদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন।
ধর্মেন্দ্রের প্রয়াণে ভারতীয় চলচ্চিত্রজগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিন পূরণ হওয়ার নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাঁর মতো দীর্ঘ অভিনয়জীবন, বহুমাত্রিক চরিত্রায়ন এবং পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে ভারসাম্য রক্ষা—সব মিলিয়ে ধর্মেন্দ্র বলিউডের একটি যুগকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র এখনো দর্শকদের কাছে সমান জনপ্রিয় এবং সিনেমা–প্রেমীদের নতুন প্রজন্মের মধ্যেও তিনি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
স্বামীকে হারানোর বেদনা সত্ত্বেও হেমা মালিনী তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং পরিবারকে কেন্দ্র করে নতুন বাস্তবতায় নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। ধর্মেন্দ্রের জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত এ স্মরণবার্তা আবারও তুলে ধরেছে তাঁদের সম্পর্কের দৃঢ়তা ও আবেগপূর্ণ যাত্রার দীর্ঘ অধ্যায়। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ধর্মেন্দ্রের অবদান ও জনপ্রিয়তা বহু বছর ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, আর তাঁর জন্মদিনে পরিবারের সদস্যদের এ স্মরণচারণ সেই উত্তরাধিকারকেই আরও দৃঢ় করে।