খেলাধুলা ডেস্ক
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মানচিত্রে নতুন একটি টেস্ট ভেন্যু যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে, যেখানে প্রথম লাল বলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হতে পারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে। ২০২৬ সালে নির্ধারিত দুই টেস্টের সিরিজের অংশ হিসেবে ম্যাকাইয়ের গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এরেনাকে অস্ট্রেলিয়ার নতুন টেস্ট কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও এখনো ভেন্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি, তবু বিকল্প কয়েকটি শহরের তুলনায় এই মাঠই সবচেয়ে এগিয়ে আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের প্রধান ডেভিড ক্রিসাফুলি জানিয়েছেন, ব্রিসবেনের ঐতিহাসিক গ্যাবা স্টেডিয়াম ১৯৭৬–৭৭ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো টেস্ট আয়োজন থেকে বিরত থাকতে পারে। স্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ সংস্কার ও কাঠামোগত উন্নয়ন-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে টেস্ট ভেন্যুর দায়িত্ব গ্রহণে ম্যাকাই এগিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন বিকল্প স্টেডিয়াম নির্ধারণের আলোচনা গতি পেয়েছে এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এরেনা সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
আগামী বছর আগস্টে অস্ট্রেলিয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে স্বাগত জানাবে। সিরিজের ভেন্যু নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, তবে ম্যাকাইয়ের পাশাপাশি কেয়ার্নস, ডারউইন ও টাউন্সভিলও আলোচনায় রয়েছে। প্রতিটি ভেন্যুই পূর্বে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করেছে, যেসব স্টেডিয়াম অবকাঠামোগত সুবিধা ও আগ্রহী দর্শকসমর্থনের কারণে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছে। তবু সাম্প্রতিক সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণে ম্যাকাইকে এগিয়ে হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এরেনাকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের উপযোগী করে তুলতে ২ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। সংস্কারের অংশ হিসেবে ১০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন গ্যালারি, আধুনিক সম্প্রচার অবকাঠামো, উচ্চমানের অনুশীলন সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানদণ্ড অনুযায়ী মাঠ ও উইকেট উন্নয়ন করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ মাঠটিকে অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য ১২তম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে।
ম্যাকাইতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ স্টেডিয়ামের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার দুটি ওয়ানডে এখানেই হয়েছিল, যেখানে উভয় ম্যাচের টিকিট আগেভাগেই বিক্রি হয়ে যায়। এর আগে নারীদের আন্তর্জাতিক ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাঠে। প্রতিটি ম্যাচে দর্শকদের সাড়া প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখার প্রতি স্থানীয় জনগণের আগ্রহ উল্লেখযোগ্য এবং একটি টেস্ট ম্যাচ আয়োজনে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের জন্যও এই সম্ভাব্য সিরিজ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ হয়েছিল ২০০৩ সালে। সে বছর ডারউইন ও কেয়ার্নসে দুটি টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ, যেখানে স্বাগতিক দল সিরিজটি ২–০ ব্যবধানে জিতেছিল। ওই সিরিজ দিয়েই ঐ দুই শহর প্রথমবারের মতো টেস্ট ভেন্যুর মর্যাদা পায়। দীর্ঘ দুই দশক পর অস্ট্রেলিয়ায় আবার টেস্ট খেলার সুযোগ মিললে বাংলাদেশ দলের জন্য তা হবে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ক্ষেত্র।
সম্ভাব্য ভেন্যু নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়া স্থানীয় অবকাঠামো, আবহাওয়া, দর্শক চাহিদা, সম্প্রচার সুবিধা ও মাঠের প্রস্তুতি বিবেচনা করছে। নতুন একটি শহরে টেস্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও বিবেচনার বিষয়। টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের মাধ্যমে পর্যটন, আবাসন, পরিবহন ও স্থানীয় ব্যবসায়িক খাতের উল্লেখযোগ্য আর্থিক গতিশীলতা তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ম্যাকাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে কেন্দ্র করে পর্যটন নগরী হিসেবে শহরের পরিচিতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
সিরিজের সময়সূচি নিশ্চিত থাকলেও ভেন্যু নির্ধারণের বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কাঠামো ও অবকাঠামোগত নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে গ্যাবার অনিশ্চয়তা অস্ট্রেলিয়ার জন্য নতুন ভেন্যু পরীক্ষার সুযোগ তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ম্যাকাইকে টেস্ট আয়োজনের দায়িত্ব দিলে অস্ট্রেলিয়া নতুন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা অনুসন্ধান করতে পারবে, একই সঙ্গে লাল বলের ক্রিকেটকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হবে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজটি অস্ট্রেলিয়ার ২০২৬ সাল পর্যন্ত ঘোষিত ভবিষ্যৎ সফরসূচির অংশ। সিরিজের মাধ্যমে দুই দেশ নিজেদের টেস্ট প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। ভেন্যু ঘোষণার পর ম্যাচ আয়োজনসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি, মাঠের অবস্থা, আবাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলোও চূড়ান্ত করা হবে।
চূড়ান্ত ভেন্যু ঘোষণা না হলেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও কুইন্সল্যান্ড কর্তৃপক্ষের বিবৃতি থেকে স্পষ্ট, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এরেনা একটি বড় সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নতুন এই ভেন্যু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানদণ্ড মেনে টেস্ট আয়োজন করতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে যুক্ত হবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যার সূচনা হতে পারে বাংলাদেশকে দিয়েই।