খেলাধুলা ডেস্ক
আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১২তম আসরকে সামনে রেখে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে। নতুন মৌসুমে চারটি দল নতুন মালিকানায় অংশ নিলেও সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রাম রয়েলস। দলটি সম্প্রতি ম্যানেজার ও মেন্টর হিসেবে হাবিবুল বাশার সুমনকে নিয়োগ দিলেও তিনি টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটিতে দায়িত্ব গ্রহণ করায় ফ্র্যাঞ্চাইজির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
হাবিবুল বাশারের দায়িত্ব পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, টুর্নামেন্টের সুষ্ঠু আয়োজন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ ক্রিকেট ব্যক্তিত্বদের যুক্ত করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাশারের দীর্ঘদিনের খেলার অভিজ্ঞতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা টেকনিক্যাল কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁকে ছাড়াও এবারের বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন এস এম রকিবুল হাসান এবং অভি আনোয়ার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিজ্ঞতার জন্য সুপরিচিত সাবেক এলিট আম্পায়ার সাইমন টাফেলও কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন। এতে করে ম্যাচ পরিচালনা, প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্ত ও মাঠস্থ পরিস্থিতি বিশ্লেষণে কমিটির সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
এবারের বিপিএলে ধারাভাষ্য প্যানেলও হচ্ছে ব্যাপক বিস্তৃত। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ ধারাভাষ্যকারদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে টুর্নামেন্টের সম্প্রচার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে আয়োজকরা। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা এবং সাবেক পেসার ওয়াকার ইউনুস এ তালিকায় রয়েছেন। একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন ইংলিশ আম্পায়ার ও ধারাভাষ্যকার মাইকেল গফ এবং ক্যারিবীয় ক্রিকেট বিশ্বে জনপ্রিয় ড্যানি মরিসন। এই বিস্তৃত প্যানেল দর্শকদের কাছে টুর্নামেন্টকে আরও প্রাণবন্ত ও আন্তর্জাতিক মানসই করে তুলবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কোচিং স্টাফও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম রয়েলসের প্রধান কোচের দায়িত্ব পাচ্ছেন দেশের জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মমিনুল হক। তাঁর সঙ্গে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করবেন নাজমুল হোসেন মিলন এবং আশরাফুল ইসলাম জিকো। দলটির কোচিং প্যানেলে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং জাতীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞ কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যার ফলে দল গঠনের প্রক্রিয়া আরও সুসংগঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রংপুর ফ্র্যাঞ্চাইজিতে কোচিং প্যানেলে রয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ মিকি আর্থার। সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ব্যাটিং কোচ হিসেবে থাকছেন শাহরিয়ার নাফিস এবং স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক তারকা স্পিনার মোহাম্মদ রফিক। রংপুরের এই বিস্তৃত কোচিং স্টাফ দলটির পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে প্রত্যাশা করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
রাজশাহী দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক জাতীয় ওপেনার হান্নান সরকার। দীর্ঘদিন ধরে কোচিংয়ে যুক্ত হান্নান সরকার ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন দলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা রাজশাহীর দল গঠন ও কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে বলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি জানিয়েছে।
ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন টবি রাদারফোর্ড। স্থানীয় খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে দল গঠনে তাঁর অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সিলেটের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সোহেল ইসলাম, যিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচিং সেটআপেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে সিলেট দল ব্যালান্সড স্কোয়াড তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
অন্যদিকে নোয়াখালী ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সুজনের নেতৃত্ব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মাঠের বাস্তবতা বিবেচনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আসন্ন বিপিএলের দলগুলো এখন মূলত স্কোয়াড চূড়ান্তকরণ, অনুশীলন পরিকল্পনা এবং ম্যাচ প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিচ্ছে। নতুন মালিকানা, নতুন কোচিং স্টাফ এবং আন্তর্জাতিক মানের টেকনিক্যাল ও ধারাভাষ্য প্যানেল যুক্ত হওয়ায় এবারের বিপিএলকে আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও মানোন্নত টুর্নামেন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, টুর্নামেন্টের কাঠামো, প্রযুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া এবং সম্প্রচার মানে যে উন্নতি আনা হচ্ছে, তা দেশীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বিপিএলের ১২তম আসর তাই শুধু প্রতিযোগিতার দিক থেকেই নয়, বরং সংগঠনের মানদণ্ড যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।