নিজস্ব প্রতিবেদক
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাসা থেকে মা ও নিজের ছাত্রী মেয়ে গলাকেটে নিহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ; ঘটনাস্থল থেকে বিচলিতভাবে বেরিয়ে গিয়ে স্কুলের ড্রেস পরে দেখা যায় ওই বাসার নতুন নিয়োগকৃত গৃহকর্মীকে, যে ঘটনার পর থেকে গায়েব। পুলিশ ঘটনার পর বাসার দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে এবং ঘটনাস্থল ও সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে সন্দেহভাজন গৃহকর্মীর পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
ঘটনার প্রথম জমা সূত্রে পুলিশ জানিয়েছে, নিহতরা হলেন মালাইলা আফরোজ (বয়স প্রাপ্ত) ও তার কন্যা নাফিসা বিনতে আজিজ (নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী)। পরিবার সূত্রে জানা যায়, নাফিসার পিতার নাম এম জেড আজিজুল ইসলাম, তিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলে ভুক্তভোগী হিসেবে ফিজিক্স পড়ান। পুলিশ ও পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী, চার দিন আগে ওই পরিবারের সেবায় কর্মরত হতে এসে নিজেকে আয়েশা বলে পরিচয় দেয় ওই গৃহকর্মী। সে সময় পরিবারের সদস্যরা তার বিস্তারিত পরিচয় যাচাই না করে কাজে রাখেন।
পরিবার ও সিসিটিভি বিশ্লেষণ থেকে প্রস্তুত করা সময়রেখা বলছে: সকালে সকাল ৭টার দিকে নাফিসার বাবা স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন; পরবর্তী সময়ে কক্ষে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে কাধে স্কুলব্যাগ ও স্কুল ড্রেস পরে বাড়ি থেকে বের হন ওই গৃহকর্মী আয়েশা; বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি ফেরেন নাফিসার বাবা এবং কক্ষাবস্থায় স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। প্রথমে একটি লাশ পাওয়া যায় এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলে অপর আক্রান্তও মারা যান; পরে উভয় লাশ ময়নাতদন্তের উদ্দেশ্যে সুরতহাল শেষে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, বলে বিষদভাবে জানিয়েছে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আয়েশা নামের ওই নারী বোরকা পরিহিত অবস্থায় দারোয়ান খালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজের সন্ধানে আসে; দারোয়ান বাড়ির লোকদের জানানোর পর স্ত্রী তার সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেন। নিহতের স্বামী আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মেয়েটির বয়স আনুমানিক ২০ বছর এবং তার দাবি ছিল গ্রামের বাড়ি রংপুরে; তিনি জানিয়েছেন কুতূহলজনকভাবে ওই গৃহকর্মীর শরীরে আগুনে পুড়ে যাওয়ার দাগ রয়েছে এবং সে নিজে বলেছে যে বাবা-মা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পরিবার বলছে, প্রথম দুই দিন সে নিয়মিত কাজ করলেও হত্যার দিন দেরিতে এসেছে।
পুলিশ জানান, ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিক ধারনা ও কিছু তথ্য মিলেছে, তবু সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মোহাম্মদপুর থানাসহ তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ ফোর্স ঘটনার স্থান পরিদর্শন করে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছে; বসতি ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং পালিয়ে যাওয়া গৃহকর্মীর সন্ধানে অভিযান চলছে। ঘটনার তদন্তে ফরেনসিক নিরীক্ষা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং সন্দেহভাজন গৃহকর্মীর পরিচয়ের নিশ্চয়তা পাওয়া এই মুহূর্তে তদন্তের প্রধান অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মর্মাহততার সৃষ্টিকারী ও উদ্বেগজনক হিসেবে জনস্বার্থে গুরুত্ব পেয়েছে; বিশ্লেষকদের মতে, এমন ধরনের ঘটনা গৃহপরিচারিকা নিয়োগ ও পরিচয় যাচাই, নিরাপত্তা বিধি ও প্রতিবেশী পর্যবেক্ষণের দিকগুলো পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনকে আবারও浮্করে দেয়। অপরদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলি বলেছে, ঘটনার তীব্রতা ও সমাজিক প্রভাব বিবেচনায় দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া হিসেবে ময়নাতদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে হত্যার ধরন, ব্যবহার হওয়া অস্ত্র ও আগের কোনো সংঘর্ষ-নির্মাণ ইঙ্গিত আছে কিনা তা নির্ধারণ করা হবে; অভিযুক্তের যদি আটকাদেশ জারি করা যায়, তা হলে পুলিশ মামলা দায়ের ও আদালতের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাবে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে নির্ভর করে ঘটনার পুরো বাস্তবতা উন্মোচিত হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।