আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে একযোগে পরিচালিত এসব হামলায় হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই অভিযান পরিচালিত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লাহর রাদওয়ান ফোর্সের ব্যবহৃত প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনাকেন্দ্র। বাহিনীটির দাবি, এসব স্থাপনায় হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা আক্রমণাত্মক কার্যক্রমের পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়নের প্রস্তুতি গ্রহণ করত। ইসরায়েল মনে করছে, সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে এসব স্থাপনা ভবিষ্যৎ হামলার অংশ হতে পারে।
হিজবুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ লেবাননে সক্রিয় একটি সংগঠন হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তজুড়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। এর ফলে সীমান্তবর্তী বসতি ও সামরিক অবকাঠামো নিয়মিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় উভয় পক্ষের বাহিনী অবস্থান শক্তিশালী করতে শুরু করেছে।
রাদওয়ান ফোর্স হিজবুল্লাহর একটি সুপ্রশিক্ষিত ইউনিট, যারা সীমান্ত এলাকায় দ্রুত আক্রমণ পরিচালনার সক্ষমতার জন্য পরিচিত। ইসরায়েলের দাবি, এই ইউনিটটি নিয়মিতভাবে সীমান্তে নজরদারি চালায় এবং আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। ইসরায়েলের নিরাপত্তা মূল্যায়নে বলা হয়েছে, এই ইউনিটের উপস্থিতি সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এ কারণেই তাদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে, লেবাননের অভ্যন্তরে গত কয়েক মাসে সংঘাত বাড়ার ফলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, দক্ষিণ লেবাননের চলমান পরিস্থিতি মানবিক সংকটের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, মঙ্গলবারের হামলায় ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোতে অস্ত্র মজুত রাখা হতো এবং হামলার পরিকল্পনায় সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তবে এসব হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের বিষয়ে লেবাননের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
গত এক বছরে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় জড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত আরও তীব্র হলে পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যার প্রভাবে পশ্চিম এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং উত্তেজনা কমাতে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তবুও সামরিক উত্তেজনা হ্রাসের কোনো লক্ষণ এখনো দৃশ্যমান নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে করে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার যেকোনো সামরিক উত্তেজনা সহজেই বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এর পাশাপাশি লেবাননের সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সর্বশেষ বিমান হামলা সীমান্ত উত্তেজনার ধারাবাহিক অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সামরিক মহল মনে করছে, উভয় পক্ষ যদি দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনায় না বসে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের এই অংশে সহিংসতার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে আরও জটিল করে তুলছে, যা আগামী দিনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।