অর্থনীতি ডেস্ক
উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার প্রদর্শনী কসমোপ্রফ-ভারত ২০২৫-এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া একটি শীর্ষ কসমেটিকস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য বার্ষিক দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আদেশের প্রত্যাশা করছে।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশে উৎপাদিত আন্তর্জাতিক কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ডের বিস্তৃত পণ্যের প্রদর্শনী শিল্প সংশ্লিষ্টদের নজর কাড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার বড় এই আয়োজনটি প্রতিবেশী দেশগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। ফলে বাংলাদেশি স্টলটি কসমেটোলজিস্ট, পাইকারি ক্রেতা, উৎপাদক ও গবেষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুলসংখ্যক পণ্য উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রং প্রসাধনী, ত্বক সুরক্ষা পণ্য এবং বিভিন্ন বিশেষায়িত স্কিনকেয়ার লাইন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ভারতজুড়ে বাজার সম্প্রসারণে যুক্ত এক বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান জানায়, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের ফলে ভারতীয় বাজারে পণ্যের পরিচিতি ও চাহিদা বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তারা জানান, কসমোপ্রফে অংশ গ্রহণের ফলে প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান, যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মসহ বিভিন্ন খাত থেকে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কসমেটিকস রপ্তানি সম্প্রসারণই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
প্রদর্শনী আয়োজকেরা জানান, কসমোপ্রফ-ভারত ২০২৫-এ ২০টির বেশি দেশের আট শতাধিক ব্র্যান্ড অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ইতালি, ব্রাজিল, কোরিয়া ও জার্মানির মতো বৈশ্বিক কসমেটিকস শক্তিধর রাষ্ট্রও রয়েছে। আয়োজকদের অনুমান অনুযায়ী, এবারের প্রদর্শনীতে কসমেটিকস শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০ হাজার প্রতিনিধি এবং পাঁচ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। এই বিশাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের উপস্থিতি দেশটির প্রসাধনী শিল্পে একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা জানান, তাদের পণ্য ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের ফলে নতুন বাজারে প্রবেশ এবং রপ্তানি অর্ডার বৃদ্ধির সম্ভাবনা আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে হালাল কসমেটিকসের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি উৎপাদিত হালাল সার্টিফায়েড পণ্যের সম্ভাবনা ব্যাপক বলে তারা মনে করছেন। প্রদর্শনীতে এসব পণ্যও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরা হয়।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া সিজিএমপি ও আইএসও মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিচালিত হয়, যা পণ্যের গুণগতমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই মান রক্ষা করার ফলে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমেটিকসের জন্য ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত পরিসরে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এছাড়া প্রদর্শনীতে প্রায় চার শতাধিক পণ্য উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে ত্বক সুরক্ষা, রং প্রসাধনী এবং বিশেষায়িত স্কিনকেয়ার সিরিজের পণ্য ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব পণ্যের প্রতি বিভিন্ন দেশের দর্শনার্থী ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের আগ্রহ লক্ষ করা যায়। প্রদর্শনীর কোরিয়া ও ইউরোপীয়ান প্যাভিলিয়নে পৃথক স্টলে এসব পণ্যের প্রদর্শন আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কসমোপ্রফ-ভারত ২০২৫-এ বাংলাদেশি পণ্যের অংশগ্রহণ স্থানীয় কসমেটিকস শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে দেশীয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি এটি বিশ্ববাজারে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। প্রদর্শনীতে পাওয়া প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমেটিকস পণ্যের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশি উৎপাদকদের অংশগ্রহণকে ভবিষ্যতে কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার শিল্পে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই অংশগ্রহণের ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কসমেটিকস পণ্যের প্রতিযোগিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নতুন মাত্রা লাভ করবে বলে শিল্প বিশেষজ্ঞদের ধারণা।