খেলাধুলা ডেস্ক
ইউরোপীয় ফুটবলের মর্যাদাপূর্ণ আসর চ্যাম্পিয়নস লিগে একই রাতে ভিন্ন ভাগ্যের মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ডের দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব লিভারপুল ও চেলসি। মাঠের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে অস্থিরতা, স্কোয়াড নির্বাচনে পরিবর্তন এবং প্রতিপক্ষের চাপ—সব মিলিয়ে উভয় ম্যাচেই ছিল উত্তেজনা ও কৌশলগত লড়াই। তবে চূড়ান্ত ফল দাঁড়িয়েছে এক ক্লাবের স্বস্তি ও অন্য ক্লাবের হতাশায়।
গতকাল রাতে সান সিরোতে গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপ ম্যাচে ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হয় লিভারপুল। সাম্প্রতিক ہفتায় দলের ভেতরকার পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে, বিশেষত মোহাম্মদ সালাহর একটি বহুল আলোচিত সাক্ষাৎকারের পর। সেই ঘটনার প্রভাব পড়ে স্কোয়াড নির্বাচনে, যেখানে দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড সালাহকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য দল থেকে বাদ রাখা হয়। এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে সমর্থক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠে এলেও লিভারপুল কোচিং স্টাফ কৌশলগত প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
সালাহকে ছাড়াই মাঠে নামা লিভারপুল শুরু থেকেই সতর্ক ফুটবল খেলতে থাকে। ইন্টার কয়েকটি আক্রমণাত্মক প্রচেষ্টা চালালেও লিভারপুলের রক্ষণভাগ ও মিডফিল্ড একাধিকবার বিপদমুক্ত করে। ম্যাচের প্রথমার্ধে তীব্র আক্রমণ–প্রতিআক্রমণের মধ্যে দুই দলই গোলের সুযোগ তৈরি করলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে ধীরে ধীরে ম্যাচে গতি বাড়ে। ইন্টার বেশ কয়েকবার লিভারপুলের ডি–বক্সে চাপ সৃষ্টি করে। এর বিপরীতে লিভারপুলও দ্রুত পাল্টা আক্রমণে গোলের সন্ধান করতে থাকে। ৮৮ মিনিটে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। লিভারপুলের একটি আক্রমণে ইন্টার ডি–বক্সে ফাউলের কারণে রেফারি পেনাল্টির সংকেত দেন। স্পট কিকে হাঙ্গেরিয়ান মিডফিল্ডার ডমিনিক সোবোসলাই ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়ালে ১–০ গোলের লিড পায় লিভারপুল। শেষ মুহূর্তের এই গোলই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে।
এই জয়ে ছয় ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুল উঠে আসে টেবিলের অষ্টম স্থানে। অন্যদিকে সমান পয়েন্ট থাকা ইন্টার গোল ব্যবধানে সামান্য এগিয়ে পঞ্চম স্থানে অবস্থান ধরে রাখে। দুই দলেরই শেষ ষোলোতে ওঠার সম্ভাবনা টিকে রয়েছে, তবে পরবর্তী ম্যাচগুলো হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একই রাতে আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসি মুখোমুখি হয় ইতালির আতালান্তার। শুরুটা ছিল লন্ডনের দলের নিয়ন্ত্রণে। এনজো মারোস্কার অধীনে খেলতে নামা চেলসি প্রথম থেকেই দ্রুত পাস ও কম্বিনেশনে আতালান্তার রক্ষণভাগে চাপ সৃষ্টি করে। ম্যাচের ২৫তম মিনিটে রিস জেমসের নিচু ক্রস থেকে জোয়াও পেদ্রো দারুণ ভলিতে গোল করেন। প্রথমে লাইনসম্যান অফসাইডের সংকেত দিলেও ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) চেকের পর গোলটি বৈধ বলে গণ্য হয়।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আরও অন্তত একটি গোল করার সুযোগ পায় চেলসি, কিন্তু সুযোগ নষ্টের কারণে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি দলটি। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার পর তাদের গতি ও নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে। আতালান্তা ধারাবাহিক আক্রমণে চেলসিকে চাপে ফেলে এবং ৫৫ মিনিটে চার্লস দে কেতেলায়ের ডানদিক থেকে দেওয়া নিখুঁত ক্রসে গেলিয়ানলুকা স্কামাকা হেডে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান।
এরপর থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আতালান্তার হাতে। চেলসির গোলরক্ষক রবার্ট সানচেস এক পর্যায়ে একহাতে অসাধারণ সেভ করে দলকে দ্বিতীয় গোল হজম করা থেকে রক্ষা করেন। তবে ৮৩ মিনিটে দে কেতেলায়ে দুর্দান্ত এক দৌড়ে ডি–বক্সে ঢুকে শক্তিশালী শটে আতালান্তাকে এগিয়ে নেন।
শেষ মুহূর্তে জোয়াও পেদ্রো সমতা ফিরিয়ে আনার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার শট সরাসরি আতালান্তার গোলরক্ষক মার্কো কারনেসেচ্চির গ্লাভসে চলে গেলে সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। ফলাফল ২–১ ব্যবধানে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় চেলসিকে।
এই জয়ে ছয় ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে আতালান্তা গ্রুপের তিন নম্বরে উঠে আসে। অন্যদিকে সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট পাওয়া চেলসি নেমে যায় একাদশ স্থানে। গ্রুপ পর্বে টিকে থাকতে তাদের বাকি ম্যাচগুলোতে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।
ইউরোপীয় মঞ্চে ইংলিশ দুই ক্লাবের এই ভিন্ন ফলাফল তাদের পরবর্তী সূচিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। লিভারপুল নিজেদের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট পেলেও চেলসিকে ফিরে তাকাতে হবে তাদের দুর্বলতা ও কৌশলগত ঘাটতির দিকে।