খেলাধুলা ডেস্ক
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিক তদন্তের আবেদন করেছে মানবাধিকারভিত্তিক সংগঠন ফেয়ারস্কোয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফিফা পিস প্রাইজ’ প্রদান এবং এ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সংগঠনটি ফিফার নীতিশাস্ত্র কমিটির কাছে এই দাবি জানায়।
ফেয়ারস্কোয়ারের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান এবং পরে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাঁর প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানানোর মাধ্যমে ইনফান্তিনো ফিফার রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত নিয়ম ভেঙেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, একজন বর্তমান রাজনৈতিক নেতাকে শান্তি পুরস্কার প্রদান এবং তার রাজনৈতিক অবস্থানকে সমর্থনমূলক বক্তব্য দেওয়া ফিফার নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০২৬ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে কেনেডি সেন্টারে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে পুরস্কার দেন ইনফান্তিনো। অনুষ্ঠানে তাঁরা পাশাপাশি বসেন এবং ইনফান্তিনো একটি বৃহৎ স্বর্ণমণ্ডিত ট্রফি, একটি মেডেল ও আনুষ্ঠানিক সনদ ট্রাম্পের হাতে তুলে দেন। বক্তব্যে তিনি ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং জানান যে তাঁর সমর্থন সবসময়ই প্রেসিডেন্টের প্রতি থাকবে।
এর আগে গত অক্টোবরে ইনফান্তিনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন যে ট্রাম্প ‘নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য’। এছাড়া নভেম্বরে মায়ামিতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান বিজনেস ফোরামের এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, বিশ্বের সবারই ট্রাম্পকে সমর্থন করা উচিত, কারণ তাঁর কর্মকাণ্ড ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে বলে তিনি মনে করেন।
ফেয়ারস্কোয়ার অভিযোগ করেছে, ইনফান্তিনোর এই সব বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড ফিফার নিয়মিত প্রশাসনিক কাঠামো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। সংগঠনটির দাবি, জানুয়ারিতে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়ার পর ইনফান্তিনোর প্রকাশ করা একটি ভিডিওও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করে এবং তা ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডার প্রতি পরোক্ষ সমর্থন প্রদর্শন করে।
অভিযোগপত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, ফিফা সভাপতি এককভাবে কোনো নীতি, মূল্যবোধ বা কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণ করতে পারেন না। সংগঠনের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিফার অবস্থানকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা সংগঠনের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও নিরপেক্ষতার নীতিকে দুর্বল করে।
ফেয়ারস্কোয়ারের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নিকোলাস ম্যাকগীহান বলেন, অভিযোগের বিষয়টি কেবল ট্রাম্পকে সমর্থন করা নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়; এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ফিফার তুলনামূলক দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামোর সুযোগ নিয়ে ইনফান্তিনো এমন কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন, যা নীতি পরিপন্থী এবং বিশ্ব ফুটবলের সামগ্রিক স্বার্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁর মতে, ফিফার মতো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে পরিচালিত হওয়াই নিয়ম, অন্যথায় এর সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম সন্দেহের মুখে পড়ে।
ফিফার পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নীতিশাস্ত্র কমিটি অভিযোগটি গ্রহণ করলে পরবর্তী ধাপে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হতে পারে। এমন তদন্ত সাধারণত কয়েক ধাপে পরিচালিত হয় এবং প্রয়োজনীয় নথি, সাক্ষ্য ও ঘটনার প্রাসঙ্গিক প্রমাণ পর্যালোচনা করা হয়। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাখ্যাও গ্রহণ করা হতে পারে।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ফিফার রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত। অতীতে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে একাধিকবার দেশ বা কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে ইনফান্তিনোর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ ছাড়া, আসন্ন ২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে আয়োজক দেশগুলোর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অভিবাসননীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ইস্যু নিয়েও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। ফিফা সভাপতির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এ নিয়ে নতুন প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগটি তদন্তের পর্যায়ে গেলে বিশ্ব ফুটবলের প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রভাব পড়তে পারে এবং ফিফার নীতি-নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে আরও আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
এ ঘটনায় ফিফার ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ এবং নীতিশাস্ত্র কমিটির সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে পর্যবেক্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।