জেলা প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমার জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অভিযোগে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের চৌপাকিয়া এলাকায় পরিচালিত ওই অভিযানে মাটি বহনকারী একটি ট্রাক জব্দ ও ব্যবসায়ী মামুন হোসেনকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পুকুর খননের ঘটনাটি স্থানীয়দের নজরে আসে। তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানালে উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যায়। অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মো. মামুন হোসেন পুকুর খননের অনুমোদনের কাগজ তৈরি করতে সাবেক ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করেন এবং সেটিকে বৈধ নথি হিসেবে ব্যবহার করে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করেন। পরে এসব মাটি বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পরিবহন করা হচ্ছিল।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন বর্তমান তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান। তিনি জানান, স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসন রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং সেখানে পুকুর খননের সত্যতা পাওয়া যায়। অবৈধ নথি ব্যবহার করে সরকারি অনুমোদন ছাড়া পুকুর খনন করায় তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। আদালত মাটি ভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করে এবং অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে। একই সঙ্গে খননযন্ত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারি খুলে জব্দ করা হয়, যাতে রাতের বেলা পুনরায় খননকাজ চালানো না যায়।
তিনি আরও জানান, পুকুর খননের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত নিয়ম-কানুন রয়েছে। কৃষিজমি, জলাধার বা পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অনুমোদন ছাড়া পুকুর খনন করলে পরিবেশ ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া মাটি কাটার কারণে জমির উর্বরতা হ্রাস পাওয়া, পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে জলবদ্ধতার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। এসব বিবেচনায় অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের অবৈধ পুকুর খনন প্রতিরোধে প্রশাসন নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বলেন, অনুমোদন ছাড়া যেকোনো ধরনের খননকাজ, বিশেষ করে রাতে গোপনে পরিচালিত কার্যক্রম, পরিবেশ ও স্থানীয় জনস্বার্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ ধরনের অভিযানে কঠোরতা অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে সরকারি অনুমোদন জালিয়াতির ঘটনা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ধরনের জাল নথি থাকলে ভবিষ্যতে জমি-সংক্রান্ত বিরোধ, মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি এবং সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হতে পারে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে এমন একটি অনিয়ম বন্ধ হওয়ায় স্থানীয়রা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিগত কয়েক বছরে কৃষিজমি কেটে পুকুর তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আর্থিক লাভের আশায় অনুমতি ছাড়া জমি কাটছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে কৃষিজ উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি ভূমির ভারসাম্যও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী।
অবৈধ পদ্ধতিতে পুকুর খননের বিরুদ্ধে এই অভিযান ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রশাসন জানিয়েছে, অনুমোদনবিহীন খনন, মাটি বিক্রি কিংবা জাল নথি ব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনস্বার্থ রক্ষা, জমির সঠিক ব্যবহার ও পরিবেশ সুরক্ষায় এসব তদারকি আরও জোরদার করা হবে বলেও জানান তারা।