বিনোদন ডেস্ক
দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নায়ক নির্বাচন এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্যের ঘাটতি আছে বলে মন্তব্য করেছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে কয়েকটি প্রোডাকশন হাউস নির্দিষ্ট নায়ককে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র নির্মাণে বেশি ঝুঁকছে, যা পুরো শিল্পের জন্য সমতা ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছে। রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অপু বিশ্বাস জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে বড় বাজেটের বা প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই একই ধরনের নায়ক নির্বাচন করছে। তার মতে, এই প্রবণতা শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র অঙ্গনে বিভিন্ন বয়স, অভিজ্ঞতা ও অভিনয়ধারার শিল্পীদের কাজ করার সুযোগ প্রয়োজন, যা শিল্পকে সমৃদ্ধ ও টেকসই করতে সহায়তা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে সৃষ্টি হওয়া প্রতিযোগিতা, নায়ক-নির্ভরতার প্রবণতা এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি মনে করেন, চলচ্চিত্র নির্মাণে বৈচিত্র্য বজায় না থাকলে দর্শকের রুচি ও প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুনত্ব আসে না। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের অভিনেতা ও নির্মাতাদের জন্যও সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি শিল্পের সার্বিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চলচ্চিত্র শিল্পের বাজার কাঠামো নিয়েও অপু বিশ্বাস মন্তব্য করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে, তারা নিরাপদ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পরিচিত মুখের প্রতি বেশি আস্থা রাখে। ফলে ঝুঁকি কম থাকলেও শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, দর্শকের চাহিদা বহুমুখী এবং সময়ের সঙ্গে তা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই চলচ্চিত্র শিল্পকে ভবিষ্যতের দর্শকসমাজের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব সম্পর্কেও তিনি কথা বলেন। তিনি জানান, বর্তমানে শিল্পীদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন নিয়ে আলোচনা প্রায়ই অতিরিক্ত নেতিবাচক হয়ে ওঠে, যা শিল্পীদের মনোবল কমিয়ে দিতে পারে। তবে গঠনমূলক সমালোচনা শিল্পকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। তিনি অনুরোধ করেন, প্রকাশিত সমালোচনা যেন ব্যক্তিগত আক্রমণ না হয়ে শিল্পের উন্নয়নকেন্দ্রিক হয়।
চলচ্চিত্র শিল্পে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আগমন নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন অপু বিশ্বাস। তিনি বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন ধরনের গল্প, চরিত্র ও অভিনয়শিল্পীদের সুযোগ দিচ্ছে, যা শিল্পকে গতিশীল করছে। এতে নতুন অভিনেতাদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি অভিজ্ঞ শিল্পীরা নতুন চরিত্রে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।
তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান চিত্রনাট্য, প্রযুক্তি ও বিপণন—সবক্ষেত্রে পরিবর্তন আনছে, যা সামগ্রিকভাবে শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বৈচিত্র্য, সৃজনশীলতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার ওপর। প্রতিষ্ঠিত ও নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করলে শিল্প আরও বিস্তৃত হতে পারবে।
অপু বিশ্বাস আরও বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বিনিয়োগ, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির নবায়ন এবং মানসম্মত চিত্রনাট্য তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী ও কারিগরি ব্যক্তিদের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং পেশাদারিত্ব বজায় থাকলে দেশীয় চলচ্চিত্র আবারও বৃহৎ দর্শকভিত্তি অর্জন করতে সক্ষম হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলচ্চিত্র অঙ্গনের সকলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে নায়ক-নির্ভরতার একমুখী চিত্র ভেঙে যাবে এবং শিল্পে বহুমাত্রিকতা বৃদ্ধি পাবে। এতে নতুন শিল্পী তৈরির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতার সুযোগও বাড়বে।