বিনোদন ডেস্ক
পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় বলিউড অভিনেতা ও গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জের নতুন ছবির শুটিং চলাকালে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রোডাকশন দলের বিরোধের জেরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর কিলা চক এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য ধারণের সময় ঘটনাটি ঘটে, যা পরবর্তীতে পুলিশের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আসে।
দিলজিৎ দোসাঞ্জ বিখ্যাত নির্মাতা ইমতিয়াজ আলির পরবর্তী ছবির শুটিংয়ে অংশ নিতে কয়েকদিন ধরে পাতিয়ালায় অবস্থান করছিলেন। শুটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা মেনে প্রোডাকশন দল পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এলাকায় সেট নির্মাণ ও পরিবেশ বিন্যাস করছিল। এতে দোকানপাটের সামনে প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা, বিভিন্ন ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড স্থাপন এবং জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
শুটিংয়ের দিন সকালে স্থানীয় বেশ কয়েকজন দোকানদার তাঁদের দোকান খুলতে গেলে প্রোডাকশন টিমের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। সেটের পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা এবং ভিড় এড়ানোর স্বার্থে শুটিং চলাকালে দোকানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ আগে থেকেই দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে দোকানদারদের অভিযোগ, তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করা এবং দোকান খোলার অনুমতি না দেওয়া নিয়ে যথাযথভাবে অবহিত করা হয়নি।
বাধা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় আশপাশের এলাকাতেও জনসমাগম বাড়তে থাকে। উত্তেজিত জনতার একাংশ অসন্তোষ জানিয়ে শুটিং এলাকায় ভিড় করলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক দ্রুতই তীব্র আকার ধারণ করলে শুটিং কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয় প্রোডাকশন টিম।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জনতাকে সরিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে এবং প্রোডাকশন দলের সঙ্গে দোকানদারদের আলোচনায় বসায়। পরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুলিশ শুটিংয়ের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেয়।
ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ জানান, বড় বাজেটের চলচ্চিত্রের শুটিং শহরের ভাবমূর্তি ও পর্যটনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এ ধরনের আয়োজনের আগে এলাকার দোকানদারদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ দাবি করেন, দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ থাকলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয় এবং যেকোনো শুটিং বা জনসমাবেশের আগে তাদের অনুমতি বা অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।
চলচ্চিত্রশিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, বড়মাপের শুটিংয়ে নিরাপত্তা ও সেটের অখণ্ডতা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্থানীয় জনগণের স্বার্থ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিবেচনায় রাখা জরুরি। যথাযথ সমন্বয় না হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে শুটিং-সংক্রান্ত কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
এ ঘটনার পর প্রোডাকশন টিম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি শুটিং চলাকালে বিকল্প ব্যবস্থা বা ক্ষতিপূরণসহ সমন্বয়মূলক পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা চলছে। শুটিং কার্যক্রম নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলবে কিনা তা প্রোডাকশন টিম পরবর্তীতে জানাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
পাতিয়ালার কিলা চক এলাকাটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও জনবহুল বাণিজ্যিক স্থানের কারণে বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে পরিচিত। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন ভবিষ্যতে এ ধরনের শুটিং আয়োজনের ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এর মাধ্যমে জনস্বার্থ রক্ষা এবং শিল্প–সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।