নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর পল্টনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পরিচালিত ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের ডরমিটরি থেকে আফতাব উদ্দিন রিগান নামের এক উপ-পরিদর্শকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও ঘটনাটির কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক শামীম হাসান জানান, সকালের দিকে ট্রেনিং স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তারা খবর পান যে ডরমিটরির একটি কক্ষের দরজা দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় এসআই আফতাব উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আফতাব উদ্দিন রিগান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল সিকিউরিটি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি ‘৩৫তম আউটসাইড ক্যাডেট-এসআই’ ব্যাচের সদস্য হিসেবে ট্রেনিং সমাপ্ত করে ২০১৭ সালে পুলিশে যোগদান করেন। কর্মজীবনের অংশ হিসেবে তিনি সম্প্রতি সিআইডির ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন এবং ওই ডরমিটরিতেই থাকতেন।
ঘটনার পর ট্রেনিং স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, সকালে দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু হলেও আফতাব উদ্দিন রিগান নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হননি। পরে সহকর্মীরা তাকে খুঁজতে গেলে তার কক্ষটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানালে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত জব্দ করেছে। তবে মৃত্যুর কারণ, ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি বা কোনো নোট রেখে যাওয়া হয়েছে কি না— এসব বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমেও মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি তার সাম্প্রতিক কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক অবস্থার বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হবে।
পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাগুলো সাধারণত বিভাগীয় তদন্ত ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচারের সম্মুখীন হয়। এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কর্মপরিবেশ, চাপ বা ব্যক্তি-সম্পর্কিত কোনো কারণ রয়েছে কি না তা যাচাই করেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এসআই আফতাব উদ্দিনের মৃত্যুর ক্ষেত্রেও এসব দিক বিবেচনায় রেখে বিস্তারিত অনুসন্ধান পরিচালনা করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন রিগান পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল সিকিউরিটি বিভাগে তাঁর কার্যক্রমের কারণে তিনি প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। সহকর্মীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি দায়িত্বশীল ও নিয়মিত কাজে নিবেদিত ছিলেন। তবে সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে কোনো চাপ বা সংকট ছিল কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
ঘটনার পর ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের নিরাপত্তা ও ডরমিটরি ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রশিক্ষণরত সদস্যদের আবাসন ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরও কার্যকর করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মত দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণত এমন ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন জোরদারের সুপারিশ করে থাকে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সহকর্মীদের বক্তব্যও নেওয়া হবে। পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্র-সংক্রান্ত কোনো সমস্যা এ মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল কি না, সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিট থেকে অতিরিক্ত নথিপত্র ও ইলেকট্রনিক ডেটাও অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সংগ্রহ করা হবে।
মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তবে ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।