আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও রাজনৈতিক সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে কারাগার এলাকায় আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা সৃষ্টি হলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান ব্যবহারসহ একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ, আর কারাগারসংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, নিয়ম ভঙ্গ করে কারাগারের ভেতরে রাজনৈতিক আলোচনা চালানোর অভিযোগে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকরণ স্থগিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে ইমরান খানের পরিবার অভিযোগ করছে, তাকে দীর্ঘ সময় মানবিক সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় রাখা হচ্ছে এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।
সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার ইমরান খানের বড় বোন আলিমা খান নিয়মিত কারাগারে দেখা করতে যান। তবে গত আট মাসে তিনি একবারও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। মঙ্গলবারও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তিনি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কারাগারের কাছে অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মী এবং সমর্থকেরা।
রাত গভীর হলে পুলিশ অবস্থানস্থলে অভিযান চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর পাথর নিক্ষেপ করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ জলকামান নিক্ষেপ করে এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করে। পিটিআই সমর্থকেরা দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে।
ঘটনার পর কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। কারাগারের মূল সড়ক বন্ধ করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করায় জনসমাগম সীমিত হয়ে পড়ে এবং নিকটবর্তী বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কর্তৃপক্ষের মতে, সম্ভাব্য অস্থিরতা এড়াতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর এক সপ্তাহ আগে ইমরান খানের আরেক বোন উজমা খানম কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি পান। প্রায় ২০ মিনিটের ওই সাক্ষাতে ইমরান খান কারাগারের ভেতরে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন এবং বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে দায়ী করেন। পরে সেনাপ্রধান তাকে মানসিকভাবে অস্থির বলে মন্তব্য করেন, যা দেশজুড়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পিটিআই নেতৃত্ব, অন্যদিকে সরকার দাবি করছে যে ইমরান খান নিরাপদেই আছেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে আদিয়ালা কারাগারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও ঘনীভূত হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রীও ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানিয়ে দীর্ঘ সময় কারাগার এলাকার বাইরে অবস্থান করেছিলেন।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে চলছে একাধিক মামলা, যার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে। ফলে তার সাক্ষাৎ নিষেধাজ্ঞা ও নিরাপত্তা জোরদার নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ পদক্ষেপ ও পুলিশের অভিযান পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পরিবার, রাজনৈতিক দল ও সরকারি সংস্থার ভিন্নমুখী অবস্থানের কারণে আদিয়ালা কারাগারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।