নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিচ্ছিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার বিষয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে। বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেছেন, র্যাবের আভিযানিক দল, ১৫টি ব্যাটালিয়ন এবং গোয়েন্দা ইউনিট দেশজুড়ে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে এবং কোনো অপরাধকেই অবহেলা বা তুচ্ছ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, যেখানে যখন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমন কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে র্যাব-১০-এর অধিনায়ক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং র্যাবের যাত্রাবাড়ী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কম্পানি কমান্ডার এস এম হাসান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, র্যাব সদর দপ্তর ও এর বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন বিগত কয়েক সপ্তাহে নানা ধরনের অপরাধ দমনে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ড এবং সংগঠিত অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বর্তমানে আগের তুলনায় আরও ব্যাপকভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যার ফলে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই অনেক ক্ষেত্রে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত একটি ঘটনায় বলা হয়, রাজধানীর পল্টন এলাকায় র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। র্যাব জানায়, তারা র্যাব সদস্য পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপরাধমূলক কাজ পরিচালনা করত। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এছাড়া লালবাগ এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক কারখানা কর্মচারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার ঘটনা ঘটলে র্যাব দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে চার ঘণ্টার মধ্যে মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়, সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করতে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগানো হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার পর হত্যার প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, বিচ্ছিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কার্যপরিচালনার দক্ষতা বাড়ায় এবং জনগণের আস্থা জোরদার করে। তিনি জানান, প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ শহর এলাকায় মোবাইল টহল, চেকপোস্ট এবং গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অপরাধীরা যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতারণা বা বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারি চলছে। র্যাব সদস্য পরিচয়ে সংগঠিত যেকোনো অপরাধকে সংবেদনশীলভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ও জেলা শহরগুলোতে জননিরাপত্তা–সংক্রান্ত কিছু ঘটনার প্রেক্ষাপটে র্যাবের নজরদারি ও অভিযানের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অপরাধ দমনে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি, তথ্য বিশ্লেষণ এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই উদ্যোগগুলো দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও সুদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তারা বলেছেন, র্যাবের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও একই দৃঢ়তা বজায় রাখা হবে।