1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

ইউক্রেনে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান ট্রাম্পের

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৬ বার দেখা হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে কিয়েভ নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে, যা দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। তাঁর মতে, ভোটার এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কার্যক্রম নিরাপদ রাখতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করা যেতে পারে।

রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাত গত কয়েক সপ্তাহে আরও তীব্র হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের আরও একটি বসতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অন্যদিকে কিয়েভ জানিয়েছে, লিমান, স্লোভিয়ানস্কসহ পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি শহরে রুশ হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। দোনেৎস্কের পোকরভস্ক শহরে তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। শহরের কিছু অংশ এখনও ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে বলে স্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিদ্যমান আইনে যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। ফলে দেশের নির্ধারিত সময়সূচির জাতীয় নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত থাকে। ২০২৪ সালের মার্চে নির্ধারিত নির্বাচনও এই কারণে পিছিয়ে যায়। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য আইনি কাঠামো সমন্বয় করা প্রয়োজন হলে সংসদে ক্ষমতাসীন দলকে তা বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভোটার, প্রার্থী ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটবর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, পর্যবেক্ষণ দল মোতায়েন এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর জেলেনস্কির ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ মনে করছেন, যুদ্ধকালীন সময়ে নির্বাচন আয়োজন কিয়েভের জন্য বড় ধরনের লজিস্টিক ও নিরাপত্তাজনিত বোঝা তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে আরেকটি অংশের মতে, নির্বাচন আয়োজন ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক বার্তা দেবে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে।

রাশিয়াও ইউক্রেনে সম্ভাব্য নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় এর প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। তবে যুদ্ধ চলমান থাকায় নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করা হয়।

সংঘাতের পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনেও তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো সামগ্রিক শান্তি প্রক্রিয়া অগ্রসর করতে নতুন উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, সংকট সমাধানে তার দেশ অব্যাহতভাবে ভূমিকা রাখবে। ব্রিটেনও ইউক্রেনকে সামরিক ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা ইউক্রেনের জন্য একদিকে যেমন রাজনৈতিক বৈধতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে, অন্যদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, ভোটার উপস্থিতি, অবকাঠামোগত সক্ষমতা ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে ভোটগ্রহণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা গেলে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি আংশিক স্থিতিশীল হলে এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ইউক্রেন নির্বাচন আয়োজনের দিকে এগোতে পারে। যুদ্ধের মধ্যে সম্ভাব্য নির্বাচন দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com