খেলাধুলা ডেস্ক
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো ‘দিবু’ মার্তিনেজ জানিয়েছেন, ২০২৬ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তিনি আগের তুলনায় আরও বেশি প্রস্তুত ও আত্মবিশ্বাসী। শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই নিজেকে ভালো অবস্থানে মনে করছেন অ্যাস্টন ভিলার এই গোলরক্ষক। গ্রুপপর্বের ড্র ঘোষণার পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, নতুন মৌসুমে ফিটনেস, প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে এখন তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
সাক্ষাৎকারে দিবু বলেন, শারীরিকভাবে তিনি নিখুঁত অবস্থায় আছেন এবং নিজের সক্ষমতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তিনি বিশ্বাস করেন, আগের বিশ্বকাপের তুলনায় এবার আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারবেন। তার মতে, দীর্ঘ মৌসুমে নিয়মিত খেলা, প্রিমিয়ার লিগের উচ্চ মান এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তাকে মানসিকভাবে আরও পরিপক্ব করেছে। ফলে জাতীয় দলের দায়িত্ব পালনে তিনি নিজেকে আগে কখনো না থাকা মতো প্রস্তুত মনে করছেন।
গ্রুপপর্বের ড্রয়ের পর আর্জেন্টিনা আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া ও জর্ডানের সঙ্গে একই গ্রুপে পড়েছে। যদিও সম্ভাব্য নকআউট পর্বে স্পেন ও উরুগুয়ের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, দিবু তবুও কোনো ভীতি দেখছেন না। তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং, এবং তিনি এসব প্রতিযোগিতাকে বাড়তি সুযোগ হিসেবে দেখেন। তার ভাষায়, অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করে এবং উচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতিকে ত্বরান্বিত করে।
আর্জেন্টিনা দলের প্রধান কোচ লিওনেল স্কালোনি ড্র–পরবর্তী বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, গ্রুপপর্বে মোট মাত্র ৭৫০ কিলোমিটার ভ্রমণ করতে হবে আর্জেন্টিনা দলকে। বিশ্বকাপে যেখানে ভ্রমণ–ক্লান্তি দলের পারফরম্যান্সে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, সেখানে কম ভ্রমণ সময় দলকে বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন স্কালোনি। তার মতে, ভ্রমণ কম হলে খেলোয়াড়দের পুনরুদ্ধার সময় বেড়ে যায়, যা গ্রুপপর্বের তিনটি ম্যাচে শারীরিক সক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
গ্রুপে শীর্ষস্থান অর্জন করতে পারলে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হতে পারে গ্রুপ–এইচ এর দ্বিতীয়স্থানকারী দলের, যার মধ্যে রয়েছে স্পেন, কাবো ভের্দে, সৌদি আরব ও উরুগুয়ে। আর গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে থাকলে নকআউটের শুরুতেই আর্জেন্টিনাকে শক্তিশালী দলগুলোর একটির মুখোমুখি হতে হতে পারে, কারণ গ্রুপ–এইচ এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্পেন বা উরুগুয়ের থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এই পরিস্থিতি দলকে শুরু থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পরিকল্পনায় থাকতে বাধ্য করবে।
নকআউট পর্বের পরবর্তী ধাপগুলোতেও আর্জেন্টিনার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করতে পারে। সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পর্তুগালের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখ করা হয়েছে টুর্নামেন্ট সূচিতে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড বা ব্রাজিলের মতো শীর্ষ দলগুলোর সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে গ্রুপপর্বে সুবিধাজনক অবস্থান ও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আর্জেন্টিনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
স্কালোনি অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, গত বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে হারের পর পুরো দলকে বাড়তি চাপ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। তাই এবারের বিশ্বকাপে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। স্কালোনি মনে করেন, শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচে মনোযোগ ধরে রাখতে পারলে দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স আরও শক্তিশালী হবে।
বিশ্বকাপ–২০২৬ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হবে। ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে। বড় আয়োজনে অধিক সাংগঠনিক প্রয়োজন, বৃহত্তর স্টেডিয়াম, দীর্ঘ ভ্রমণ এবং সময়সূচির কঠোরতা—সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপ দলগুলোর জন্য হবে বিশেষ পরীক্ষা। প্রস্তুতির এই পর্যায়ে দিবু মার্তিনেজের আত্মবিশ্বাস এবং স্কালোনির সতর্ক বার্তা ইঙ্গিত দেয় যে, শিরোপা রক্ষায় আর্জেন্টিনা দল গতবারের মতোই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
দলের নেতৃত্বে আছেন লিওনেল মেসি, যিনি আগের বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা এনে দেন। মেসি ও দিবুর অভিজ্ঞতা, স্কালোনির কৌশল, এবং দলের সামগ্রিক ভারসাম্য—এই সবকিছু মিলিয়ে আর্জেন্টিনা আবারও বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দলের ভেতরে ইতিবাচক পরিবেশ এবং খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই আর্জেন্টিনা নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ২০২৬ বিশ্বকাপ অভিযানে।