আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় জলসীমা থেকে একটি বৃহদাকারের জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বুধবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ তথ্য জানান। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ট্যাংকারটি জব্দ করা হয় বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বড় তেলবাহী ট্যাংকার আটক করা হয়েছে এবং জব্দকৃত ট্যাংকারগুলোর মধ্যে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়। তিনি আরও জানান, জব্দ অভিযানের বিস্তারিত তথ্য পরে প্রকাশ করা হবে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক জলসীমায় নজরদারি অভিযানের সময় শনাক্ত করা হয়। কোস্টগার্ডের জাহাজ এবং আকাশপথের নজরদারি সমন্বয়ের মাধ্যমে ট্যাংকারটি থামানো হয় এবং পরবর্তীতে মার্কিন কর্তৃপক্ষ সেটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। জব্দের পর ট্যাংকারটিকে উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে এর মালামাল, নথিপত্র এবং সম্ভাব্য অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যৌথ টহল জোরদার করা হয়েছে। এসব এলাকায় সন্দেহভাজন মাদক বহনকারী নৌযানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো, এটি মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, অঞ্চলটিতে অবৈধ মাদক পরিবহনের একটি বড় অংশ সমুদ্রপথে সম্পন্ন হয় এবং তা প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
গত কয়েক মাসে পরিচালিত এ ধরনের অভিযানে বহু নৌযান জব্দ করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব অভিযানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এসব কার্যক্রমের লক্ষ্য কেবলমাত্র অবৈধ মাদকবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, মানবপাচার প্রতিরোধ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা।
তবে ভেনেজুয়েলা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এসব উদ্যোগকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে। দেশটির অভিযোগ, এসব অভিযান মূলত প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা। ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত সামরিক উপস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং এটি সার্বভৌমত্বের প্রতি অশ্রদ্ধার পরিচয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। ভেনেজুয়েলার তেলসম্পদ, দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধতার পরিবর্তন দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে। সামুদ্রিক অভিযান বৃদ্ধির ফলে অঞ্চলটিতে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। বিশেষ করে জ্বালানি পরিবহনের ওপর বাড়তি নজরদারি তেলবাহী জাহাজ চলাচলে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
জব্দ হওয়া ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে। দেশটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত অবস্থায় আছে এবং জ্বালানি রপ্তানি তাদের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। সামুদ্রিক অভিযানের ফলে তেলবাহী জাহাজের ওপর অতিরিক্ত নজরদারি বৃদ্ধি পেলে ভেনেজুয়েলার রপ্তানি কার্যক্রম আরও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইন মেনে পরিচালিত হয় এবং কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের উদ্দেশ্য এতে নেই। তারা অঞ্চলে বৈধ বাণিজ্য সুরক্ষা, সমুদ্রপথে অপরাধ দমন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসব অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে।
জব্দ ট্যাংকারটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ট্যাংকারটির মালিকানা, পরিবহন নথি, জ্বালানির উৎস এবং সম্ভাব্য অবৈধ বাণিজ্যের প্রমাণ আছে কি না, তা যাচাই করছে। তদন্ত শেষ হলে ট্যাংকারটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা পরবর্তীতে জানা যাবে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান আরও বাড়বে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নৌ-অভিযান ও ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।