আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের জাহেদান এলাকার লার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসী ও শত্রু গোষ্ঠীর হামলায় ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর সীমান্ত টহলরত অবস্থায় এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে আইআরজিসির কুদস আঞ্চলিক সদর দফতর এক সরকারি বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত সুরক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী আইআরজিসি সদস্যরা হঠাৎ সশস্ত্র গোষ্ঠীর আক্রমণের মুখে পড়েন। হামলাকারীরা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে হামলা চালালে ঘটনাস্থলেই তিনজন সদস্য প্রাণ হারান। হামলার পরপরই আইআরজিসি স্থানীয়ভাবে তাৎক্ষণিক অভিযান শুরু করে এবং সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার জন্য এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি শুরু হয়েছে।
ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশ দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতার জন্য আলোচিত। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা এ অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে দুর্গম এবং বহু জাতিগোষ্ঠীর সহাবস্থানের ফলে জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখোমুখি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রদেশটিতে আইআরজিসি সদস্য, সীমান্তরক্ষী এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ঘন ঘন হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব হামলার পেছনে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় চোরাচালান সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততা আছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরানের সরকারি সূত্র অনুসারে, উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কিছু অংশ পাকিস্তান সীমান্তের দুর্গম এলাকায় অবস্থান নিয়ে ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ আছে বলে দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করে আসছে ইরান। তবে এই হামলার সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী যুক্ত কিনা, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। আইআরজিসি জানিয়েছে, হামলার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিশেষ অভিযান চলছে এবং সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সিস্তান-বেলুচিস্তানকে ইরানের কৌশলগতভাবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান দমনে এই অঞ্চল বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তবে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা ও ভূগোলগত চ্যালেঞ্জের কারণে সেখানে আইআরজিসি, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী নিয়মিত সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হচ্ছে। ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকার মতো এখানেও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
এ ধরনের হামলা ইরানের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে গেলে চোরাচালান, অবৈধ পারাপার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর গতিবিধি বেড়ে যেতে পারে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় আইআরজিসি এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি নজরদারি ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের পদক্ষেপও চলছে।
হামলার পর আইআরজিসির অভিযানে নতুন করে কোনও সংঘর্ষ হয়েছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে ইরানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানা, যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং সম্ভাব্য সহযোগীদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চেকপোস্ট সংখ্যা বাড়ানো এবং টহল কার্যক্রম জোরদার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম আরও কঠোর করার নীতি অনুসরণ করছে। দেশের পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকে বিশেষ নিরাপত্তা জোন হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবুও এসব অঞ্চলে সময় সময়ে সন্ত্রাসী হামলা ঘটছে, যা সীমান্ত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইআরজিসি জানায়, নিহত সদস্যদের মরদেহ সম্মানজনকভাবে নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। হামলার পেছনে থাকা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় বাহিনীটি।