নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আয়েশা এবং তার স্বামী রাব্বির রিমান্ড আবেদন শুনানি শেষে আদালত পৃথক মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলমের আদালত আয়েশাকে ছয় দিনের এবং রাব্বিকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই রিমান্ড আবেদন করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. সহিদুল ওসমান মাসুম আদালতে দুই আসামির প্রত্যেকের দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হারুন-অর-রশিদ রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি উপস্থাপন করেন। তবে, আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত প্রয়োজনীয় তদন্তের স্বার্থে আয়েশা ও রাব্বির পৃথক মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৮ ডিসেম্বর সকালে। নিহত লায়লা ফিরোজ ও তার কন্যা একই বাসায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার পর লায়লা ফিরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, আসামি আয়েশা মাত্র কয়েক দিন আগে, ৫ ডিসেম্বর, খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে তাদের বাসায় কাজ শুরু করেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আজিজুল ইসলাম তার কর্মস্থলে রওনা দেন। কর্মস্থলে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। পরে উদ্বেগ বোধ করায় তিনি সকাল ১১টার দিকে বাসায় ফিরে আসেন এবং এসে দেখেন তার স্ত্রী ও মেয়ে গুরুতরভাবে আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে এবং গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। মেয়ের গলার ডান পাশেও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। মেয়েকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হলেও চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ এবং প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারণা পায়, বাসায় থাকা মূল্যবান সামগ্রী লোপাট করতেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বাসার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে গৃহকর্মী আয়েশা কাজ করার জন্য বাসায় প্রবেশ করেন। তবে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তাকে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায় এবং তখন তার হাতে পরিবারের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ছিল। এই ফুটেজ পর্যালোচনার ভিত্তিতে বাদী নিশ্চিত হন যে, সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যবর্তী সময়ে কোনো এক পর্যায়ে তার স্ত্রী ও মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, মামলার জটিলতা এবং হত্যার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য উদ্ঘাটনের জন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, বাসার মূল্যবান সামগ্রী নেওয়ার বিষয়টি তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পুলিশ ধারণা করছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে, অথবা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে ঘটে যাওয়া অপরাধ হতে পারে—যা নির্ধারণে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অপরিহার্য।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও জানায়, রিমান্ডে আয়েশা ও রাব্বির কাছ থেকে ঘটনাপ্রবাহ, হত্যাকাণ্ডের কারণ, ব্যবহৃত অস্ত্র, এবং চুরি হওয়া সামগ্রীর উৎস ও অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্যান্য ফরেনসিক তথ্যও এই তদন্তে গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে, তদন্ত কর্মকর্তারা পারিবারিক পরিবেশ, গৃহকর্মীর কর্মপ্রবাহ এবং তাদের পূর্ব ইতিহাসও যাচাই করছেন।
এই হত্যাকাণ্ডে দুইজন নারী-শিশুর মৃত্যু হওয়ায় এলাকায় চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বাসিন্দারা নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পুলিশকে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অপরাধের পূর্ণ চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, রিমান্ড শেষে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আশা করছে, রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পটভূমি, উদ্দেশ্য ও অপরাধের পূর্ণমাত্রা দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে।