জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসভা ও নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইসির প্রজ্ঞাপনে জনসভা আয়োজন, প্রচারসামগ্রী ব্যবস্থাপনা এবং আইন–শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী নির্বাচনী জনসভা করতে চাইলে সভা শুরুর কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে জনসভার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। পুলিশ সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, চলাচল নিশ্চিতকরণ এবং জনসমাগম ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একই স্থানে একই সময় একাধিক প্রার্থী বা দলের কর্মসূচি এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে প্রচারণা কর্মসূচির সমন্বয় করবে।
নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে আচরণ বিধিমালা মেনে চলতে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইসি জানায়, প্রচারণা শুরুর আগে প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রচারণা কার্যক্রমের প্রস্তাব দাখিল করতে হবে। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রচারণা কার্যক্রমের সময়সূচি ও স্থান নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে।
প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ফেস্টুন, ব্যানার বা বিলবোর্ডের ওপর অন্য কোনো প্রার্থীর প্রচারসামগ্রী টাঙানো যাবে না। এসব প্রচারসামগ্রীর ক্ষতিসাধন, অপসারণ বা বিকৃতিও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নির্বাচনী এলাকায় প্রচারসামগ্রী অপসারণ বা নষ্ট করার ঘটনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে—এ কারণে আচরণ বিধিমালা কঠোরভাবে মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে কমিশন।
প্রচারসামগ্রীর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ইসি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছে। সংসদীয় আসনের প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা বা মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে। একই সঙ্গে সমগ্র নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি ব্যবহার করা হলে তা আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।
লাউড স্পিকার বা মাইক্রোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কমিশন সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ কোনো নির্বাচনী এলাকার একক জনসভায় সর্বোচ্চ তিনটি মাইক্রোফোন বা লাউড স্পিকার ব্যবহার করতে পারবে। তবে সাধারণ প্রচারণার জন্য মাইক্রোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতা প্রযোজ্য হবে না। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রচারণার শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং আশপাশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখার স্বার্থে এই নীতিমালা কার্যকর থাকবে।
জনসভা আয়োজনের ক্ষেত্রে পুলিশকে আগে থেকে অবহিত করার নির্দেশনার উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী পরিবেশকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় জনসভা বা বড় সমাবেশ আয়োজনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও জনসাধারণের অসুবিধা কমানো—এসব বিষয় নিশ্চিত করতেই এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাসময়ে তথ্য দিলে তারা অবস্থান মূল্যায়ন করে পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করতে সক্ষম হবে।
নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এজন্য প্রচারণার সময়সূচি, স্থান ব্যবস্থাপনা এবং প্রচারসামগ্রীর ব্যবহার বিষয়ে কমিশন কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ইসির ভাষ্য অনুযায়ী, আচরণ বিধিমালা বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব নির্দেশনা কার্যকর করা হবে।
এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণায় সমতা নিশ্চিত করতে প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে যে, কোনো প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে অসুবিধায় ফেলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না। প্রচারণার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে দলগুলোকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানানো হয়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আচরণ বিধিমালা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে নজরদারি জোরদার থাকবে। প্রার্থীরা বিধিমালা লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যেই এসব নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে।