জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোর উপজেলার একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছর বয়সী শিশু সাজিদকে অবশেষে ৩২ ঘণ্টা পর অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করার পর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদা জানান, শিশুটি দীর্ঘ সময় গর্তে আটকা থাকায় অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এবং অক্সিজেনের ঘাটতিতে তার মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকের পরীক্ষায় শিশুর শরীরে জীবনচিহ্ন পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধার দলের সঙ্গে থাকা তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান শিশুর মৃত্যুর সংবাদ জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, শিশুটি আর বেঁচে নেই। শিশুটির জীবন রক্ষায় সব ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও সেটি সম্ভব হয়নি।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুটি নলকূপের গর্ত থেকে তোলার পরও তার নড়াচড়া দেখা গিয়েছিল বলে তারা দাবি করেন। শিশুটির নানা আইয়ূব আলী জানান, উদ্ধারকর্মীরা প্রথমে জানিয়েছিলেন যে সাজিদ জীবিত আছে। তিনি নিজেও শিশুটিকে নড়াচড়া করতে দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে শিশুটির মরদেহ তার নিজ বাড়ি তানোরের কুড়িরহাট পূর্বপাড়ায় নেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিত্যক্ত একটি নলকূপের গভীর গর্তে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। খবর পেয়ে তানোর, রাজশাহী সদর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনের তিনটি ইউনিট উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। প্রথমে ক্যামেরা ব্যবহার করে শিশুটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হলেও গর্তে জমে থাকা মাটি ও খড়ের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপর স্কেভেটর দিয়ে নলকূপের পাশ থেকে ৩০ ফুট গভীর বিকল্প গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়।
রাতভর এবং পরদিন দুপুর পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলতে থাকে। উদ্ধারকাজের সমন্বয় করেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জানান, রাত ৯টায় শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং অবিলম্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা শিশুটির শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উদ্ধারকাজের সময় গর্তের গভীরতা, সংকীর্ণ স্থান ও গর্ত ভেঙে পড়ার ঝুঁকির কারণে উদ্ধার অভিযান জটিল হয়ে পড়ে। ফলে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে শিশুর অবস্থানের দিকে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে সময় বেশি লেগেছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক ভিড় দেখা দেয়। শত শত মানুষ উদ্ধার অভিযানস্থলে উপস্থিত থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হয়। উদ্ধারকাজ যাতে নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা যায়, সে জন্য বেশ কিছু এলাকা ঘিরে রাখা হয়।
এ ধরনের পরিত্যক্ত নলকূপের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের মতে, পরিত্যক্ত নলকূপগুলো সঠিকভাবে বন্ধ বা চিহ্নিত না থাকলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসন জানিয়েছে, তানোরসহ আশপাশের এলাকায় পরিত্যক্ত নলকূপগুলো শনাক্ত করে নিরাপদভাবে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শিশু সাজিদের মৃত্যুর ঘটনাটি এলাকায় গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘসময় ধরে চলা উদ্ধার অভিযানের প্রত্যাশা ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটলেও শিশুটিকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে না পারায় স্থানীয়রা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রশাসন ও উদ্ধার সংস্থাগুলো ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।