জাতীয় ডেস্ক

ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার পর দায়ীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমকে জানান, হামলাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিট সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

ঘটনার দিন দুপুরে মোটরসাইকেলযোগে আসা দুই সশস্ত্র ব্যক্তি রাজধানীর কালভার্ট রোড এলাকায় রিকশায় থাকা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিকেল তিনটার দিকে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তার মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি বর্তমানে গভীর অচেতন অবস্থায় রয়েছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ডিএমপি কমিশনার জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করেছেন এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হামলার পরপরই পালিয়ে যাওয়া হামলাকারীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, পুলিশ তাদের খুঁজে বের করবে। এ ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ ছাড়াও র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।

মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. হারুন অর রশিদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে হামলাকারীরা লক্ষ্যবস্তু নিশ্চিত করেই ওসমান হাদির ওপর গুলি চালায়। তিনি বলেন, রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেলে এসে দুই ব্যক্তি খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে এবং হামলাকারীদের শনাক্তে একাধিক দল মাঠে রয়েছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোশতাক আহমেদ জানান, গুলিবিদ্ধ অংশটি মাথার সংবেদনশীল স্থানে হওয়ায় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসা দিয়ে তাকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। তার অবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষণ চলছে।

হামলার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই জুলাই অভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট আন্দোলনকারীরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢামেক হাসপাতালে জড়ো হন। তারা হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, এই হামলা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নিরাপত্তা ইস্যুকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভোটের আগে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকলেও এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাটি পরিকল্পিত ছিল কিনা, অথবা কোনো সংঘাতের ধারাবাহিকতা থেকে এটি ঘটেছে কিনা—সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত চলছে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঢামেক হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

প্রার্থীর রাজনৈতিক ভূমিকা, সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও সম্ভাব্য বিরোধ নিয়ে তদন্ত চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অনুসন্ধানকারী দল রিকশাচালকসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অস্ত্রের ধরন, গুলির দিক ও দূরত্ব সম্পর্কেও ফরেনসিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধারণা, দ্রুত আলামত সংগ্রহ ও সাঁড়াশি অভিযান চালানোর ফলে হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে বেশি সময় লাগবে না। তদন্ত প্রক্রিয়া অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরও অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে।

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে ডিএমপি। প্রার্থীদের নিরাপত্তা এবং নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার থাকবে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করতে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।