নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আল্টিমেটামও দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মঞ্চ ২৪-এর আহ্বায়ক ফাহিম ফারুকী এসব দাবি জানান। তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তার দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা না হলে সংগঠনটি ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
ফাহিম ফারুকী হামলার ঘটনাকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে মন্তব্য করেন এবং বলেন, এ হামলার মধ্য দিয়ে একটি মহল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে তারা মনে করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণেই তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে এসব অভিযোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে হাদির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে ফাহিম ফারুকী বলেন, তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন। তাকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে এবং পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে উপস্থিত আছেন। তিনি জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার পর তাকে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাদির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, গুলিটি হাদির বাম কানের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এতে তার মস্তিষ্কের কাণ্ড বা ব্রেন স্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এটিকে ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে জানান তিনি।
ডা. সায়েদুর রহমান আরও বলেন, এ ধরনের আঘাত অত্যন্ত জটিল ও জীবননাশের ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি জানান, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ের মধ্যে নতুন কোনো অস্ত্রোপচার বা ইন্টারভেনশন করা হবে না; বরং অবস্থা স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানানো হয়, বর্তমানে হাদিকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের সহায়তায় রাখা হয়েছে। তার স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত সীমিত এবং এখনই সুস্থতার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসক দল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হামলার ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের সহিংস ঘটনা নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে এবং জনমনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করতে পারে।
এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।