জাতীয় ডেস্ক
নির্বাচনের প্রাক্কালে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও ভাই-বোনের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেকে আতঙ্কিত মনে করছেন না বলে উল্লেখ করেছেন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা জানান।
ফেসবুক পোস্টে শফিকুল আলম উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১৬ মাস পূর্ণ হয়েছে। তিনি লেখেন, দায়িত্ব পালনের এই সময়কাল নিয়ে দীর্ঘ সময় লেখার মানসিক অবস্থায় ছিলেন না। তবে সাম্প্রতিক এক গুলিবর্ষণের ঘটনার পর আহত ওসমান হাদিকে কেন্দ্র করে তার ভাবনা ও দোয়ার কথা তুলে ধরেন। পোস্টে তিনি জানান, ওই ঘটনার পর থেকে বিষয়টি তাকে গভীরভাবে ভাবিয়েছে।
শফিকুল আলম তার লেখায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তিনি অসংখ্য তরুণকে দেখেছেন, যাদের সঙ্গে আহত হাদির অবস্থার মিল রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তার বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তরুণদের ভূমিকা এবং সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গ উঠে আসে।
পোস্টে তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন প্রজন্ম সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এবং তারা অতীতে একটি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রজন্মের রাজনৈতিক দায়িত্ব ও লক্ষ্য এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, তরুণদের বড় একটি অংশ তাদের অবস্থান থেকে সরে না দাঁড়ানোর মনোভাব প্রকাশ করছে।
শফিকুল আলম আরও লেখেন, তরুণদের মধ্যে ভয় বা হতাশা কাজ করছে—এমন কোনো লক্ষণ তিনি দেখছেন না। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রজন্মের অনেকেই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ত্যাগের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি তার পোস্টে কয়েকজন নিহত তরুণের নাম উল্লেখ করেন, যাদের তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে স্মরণ করেছেন।
পোস্টে তিনি বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে বিভিন্ন ঘটনায় একাধিক তরুণ নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনাকে তিনি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার লেখায় বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কথাও উঠে আসে। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে নানা চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তবে তরুণদের ভূমিকা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ হবে।
শফিকুল আলম তার পোস্টে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন, তার পরিবার নির্বাচনের আগে তাকে আরও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছে। তিনি জানান, তার স্ত্রী, সন্তান এবং ভাই-বোন তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং ভীত। তবে নিজের অবস্থান সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তিনি নিজে আতঙ্কিত নন।
তিনি লেখেন, সামনের দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নানা ধরনের চাপ ও প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। শক্তিশালী দেশি ও বিদেশি পক্ষগুলো বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে তার মতে, তরুণদের অংশগ্রহণ ও দৃঢ় অবস্থান দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
পোস্টের শেষাংশে শফিকুল আলম বলেন, ভবিষ্যৎ দশকগুলোতে বাংলাদেশ পথ হারাবে না—এমন প্রত্যাশা তার রয়েছে। তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন, তরুণদের মধ্যে ভয় কাজ করছে না এবং ব্যক্তিগতভাবেও তিনি নিজেকে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্কে ভুগছেন না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবের এই ফেসবুক পোস্ট রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা, নির্বাচনকালীন পরিবেশ, তরুণদের ভূমিকা এবং সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে তার বক্তব্যকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট মহল।