নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহজভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং এ প্রক্রিয়াকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনাগুলো তার আশঙ্কাকেই প্রতিফলিত করছে এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। কর্মশালায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, এর আগে তিনি যে আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছিলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। তিনি চট্টগ্রামে বিএনপির এক প্রার্থীর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে নির্বাচনকে ঘিরে ঝুঁকি ও প্রতিবন্ধকতা এখনও বিদ্যমান। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব থাকলে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দলের ভেতরে এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য কমিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় স্বার্থে ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হতে পারে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ভয় বা আতঙ্কে না থেকে জনগণের মধ্যে সাহস ও আস্থা জাগিয়ে তোলাই এখন প্রধান দায়িত্ব।
কর্মশালায় বক্তব্যে তারেক রহমান বিএনপির বিভিন্ন নীতিগত ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, খাল খনন, স্বাস্থ্য কার্ড, কৃষক কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড প্রবর্তন, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, বেকারত্ব নিরসন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, বায়ু ও পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক খাতে দলটির পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিত ধারণা দেন এবং বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় এ ধরনের কাঠামোগত উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তারেক রহমান আরও বলেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রগুলো শিগগিরই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব আরও বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক ভূমিকা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিবেশ যত দ্রুত তৈরি করা যাবে, তত দ্রুতই প্রতিকূল শক্তিগুলো পিছু হটতে বাধ্য হবে। এজন্য নেতাকর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা ও জনগণের অংশগ্রহণকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তারেক রহমানের বক্তব্যে দলীয় সাংগঠনিক শক্তি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি নেতাকর্মীদের আত্মসমালোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বা স্বার্থের হিসাব বাদ দিয়ে দেশ ও জাতির জন্য দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে। তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান এবং বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের সমর্থনই সবচেয়ে বড় শক্তি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। সভায় বিএনপির নীতি, কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা হয় এবং নেতাকর্মীরা মতামত উপস্থাপন করেন।